নিউজ ডেস্ক: কিছুদিন আগেই মহার্ঘ ভাতার (DA) ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। পরে অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের কথাও বলা হয়। কত শতাংশ ডিএ দেওয়া হবে এরাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের? বাজেট অধিবেশনের আগে অঙ্ক কষছে পশ্চিমবঙ্গ অর্থ দফতর। তবে সূত্র অনুযায়ী রাজ্যের সরকারি কর্মীদের ৪ থেকে ৬ শতাংশ ডিএ দেওয়ার বিষয়ে হিসাব নিকাশ চলছে।
সূত্র জানিয়েছে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৪ থেকে ৬ শতাংশ ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণা বাজেটে করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে রাজ্য বাজেটের পরে সরকারি কর্মীদের ডিএ বাড়তে পারে। যদিও পুরো বিষয়টি নিয়েই কানাঘুষো চলছে, মুখ্যমন্ত্রী এখনও কোনও ইঙ্গিত দেননি। যদিও, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সব বকেয়া ডিএ বাজেটে ঘোষণার মাধ্যমে দিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের কোর কমিটির সদস্য নির্ঝর কুণ্ডু বলেন,’রাজ্য সরকার সরকারি কর্মচারীদের সমস্ত বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিক। সরকার এটা করতে বাধ্য। আর না হলে বাধ্য হবে, সেই পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। সরকার সেটা বুঝতেও পেরেছে। আমরা আরও বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। অপেক্ষা করার একটা সীমা থাকে। আমরা বকেয়া ডিএ দিয়ে দিতে সরকারকে বাধ্য করাব। উনি ডিএ দেবেন কি দেবেন না, তা মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছার ওপরে নির্ভর করছে না। বকেয়া ৩৯ শতাংশ ডিএ মিটিয়ে দিক।’
কিছুদিন আগেই কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বেতনে ফারাকের কথা তুলে ধরছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর মন্তব্যের পরে, বিশেষত রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের পাওনা নিয়ে বাড়তি ভাবনা ভাবতে হচ্ছে নবান্নকে।
প্রশাসনিক সূত্রে তাঁরা জেনেছেন, বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই আসন্ন বাজেটে বেশ কিছু নতুন প্রকল্পের ঘোষণা করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ছাড়াও রূপশ্রী, কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রকল্পগুলিতে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ হতে পারে। তার ভিত্তিতেই সরকারি কর্মচারীরা মনে করছেন, তাঁদের মন পেতে বাজেটে বড় অঙ্কের ডিএ ঘোষণা করতে পারে সরকার।
বাজেট অধিবেশন শুরুর আগে আপাতত ডিএ নিয়ে অঙ্ক কষতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন অর্থ দফতরের শীর্ষ আধিকারিকেরা। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার অষ্টম পে কমিশন ঘোষণা করার পরে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) মধ্যে পার্থক্য উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাতে ডিএ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলনরত রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলির ক্ষোভ খানিকটা বেড়েছে বইকি। ভোটের কাজে সরকারি কর্মচারীদের বড় ভূমিকা থাকে। তাই রাজ্য বাজেটে তাঁদের জন্য রাজ্য সরকারকে অতিরিক্ত কিছু ভাবতে হবে বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ।
রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী বলেন, ‘‘নতুন বছরের শুরুতেই আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বকেয়া ডিএ দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের যে ৩৯ শতাংশ ডিএ বাকি, এ বারের বাজেটে সেই পরিমাণ ডিএ সরকারি কর্মচারীদের দেওয়ার দাবি করেছি আমরা।’’ বকেয়া ডিএ-র দাবিতে গত দু’বছর ধরে আন্দোলনকারী সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের (সরকারি কর্মচারীদের ৩০টি সংগঠন মিলে গঠিত কমিটি) আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষের আবার বক্তব্য, ‘‘রটনা যে সব সময় ঘটনা হবে, তার কোনও অর্থ নেই। আগে রাজ্য সরকার সরকারি কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিক। তার পরে না হয় এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে। তবে গত বছর মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছিলেন, রাজ্যে সাড়ে পাঁচ লক্ষের বেশি সরকারি শূন্য পদ রয়েছে। সেই বিষয়েও সরকার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করুক।’’
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ৫৩% হারে ডিএ পাচ্ছেন। আর পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা পাচ্ছেন ১৪% হারে। ফলে এরাজ্যের সরকারি কর্মীরা ৩৯ শতাংশ ডিএ কম পাচ্ছেন।