Homeদক্ষিণবঙ্গদৃষ্টান্তমূলক নির্দেশ: শিক্ষিকার বদলির আবেদন আটকে রাখার জন্য পরিচালন সমিতিকে ৫০ হাজার...

দৃষ্টান্তমূলক নির্দেশ: শিক্ষিকার বদলির আবেদন আটকে রাখার জন্য পরিচালন সমিতিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

নিউজ ডেস্ক: শিক্ষকদের বদলি সংক্রান্ত একটি বড় খবর সামনে এল। শিক্ষিকার বদলির আবেদন বছরের পর বছর ফেলে রাখার অমানবিক সিদ্ধান্তের জন্য কলকাতা হাইকোর্ট ম্যানেজিং কমিটিকে ৫০,০০০ টাকা জরিমানা করেছে। এই টাকা আবেদনকারী শিক্ষিকাকে দিতে বলা হয়েছে। এই জরিমানা ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের ব্যক্তিগতভাবে বহন করতে হবে। সাগর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুমতীনগর শরৎ কুমার হাই স্কুল এর শিক্ষিকা মানসী সর্দার তার শারীরিক কারণে বদলির আবেদন করেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের এজলাসে এই রায় হয়। আইনজীবী হিসাবে ছিলেন উজ্জ্বল রায়। 

বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির উদাসীনতার কারণে আদালত এই ম্যানেজিং কমিটির তীব্র সমালোচনা করে। আবেদনকারী শিক্ষিকার শারীরিক ও মানসিক কষ্টের কথা বিবেচনা না করে, ম্যানেজিং কমিটি যে উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে, তা নিন্দনীয়। আদালত ম্যানেজিং কমিটির এই আচরণকে অমানবিক আখ্যা দিয়েছেন এবং আবেদনকারীর প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন। আদালত রায় দিয়েছেন যে যদি কোনো শিক্ষক বা কর্মী অসুস্থতার কারণে বদলির আবেদন করেন, তাহলে আবেদনকারীর রোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে, এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু এই মামলায় দেখা যাচ্ছে, আবেদনকারী শিক্ষিকা ২০১৯-২০২০ সাল থেকে তার রোগের কারণে বদলির আবেদন করে রেখেছেন, যা ম্যানেজিং কমিটি বছরের পর বছর ফেলে রেখেছে। এমনকি তারা এখন বলছেন যে, আবেদনকারীর জমা দেওয়া নথিপত্র সঠিক নয়। আদালত বলেছেন, এই ধরনের মানবিক আবেদন বছরের পর বছর ফেলে রাখা অত্যন্ত অসংবেদনশীলতার পরিচয়।

এই রায় শুধু শিক্ষিকা মানসী সর্দার এর ব্যক্তিগত বিজয় নয়, বরং সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। এটি প্রমাণ করল যে, প্রশাসনিক জটিলতা বা গাফিলতির কারণে কোনো শিক্ষকের ন্যায্য অধিকার খর্ব হতে পারে না। আদালত পরিচালনা কমিটির গাফিলতির কারণে তাদের উপর জরিমানা ধার্য করে এটি নিশ্চিত করেছেন যে ভবিষ্যতে এ ধরনের অন্যায়ের পুনরাবৃত্তি রোধ করা হবে। 

শিক্ষক সংগঠন “অল পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন” এর সম্পাদক চন্দন গরাই বলেন, বদলি নীতি সরল করার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে স্কুল শিক্ষা দপ্তরকে আবেদন জানিয়ে আসছিলাম, শিক্ষা দপ্তর বিষয়গুলো নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। এছাড়াও, কিছু ম্যানেজিং কমিটির ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসায় হাইকোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন।” 

পড়ুন:  শোক সংবাদ: মৃত্যু হল স্কুলের সহকারি শিক্ষকের, শোকের ছায়া নেমেছে এলাকায়

এই কেসের পিটিশনারের এডভোকেট উজ্জ্বল রায় বলেন, মাননীয় বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন মহাশয়ের এজলাস থেকে যে ঐতিহাসিক রায় প্রদান করা হয়েছে, তা শুধুমাত্র মানসী সর্দারের ন্যায়বিচারের বিজয় নয়, বরং সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির অমানবিক ও উদাসীন আচরণের বিরুদ্ধে আদালতের কঠোর অবস্থান এবং জরিমানা ধার্য করার সিদ্ধান্ত যথার্থ ও সময়োপযোগী। এই মামলায় স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান যে, কোনো অসুস্থ শিক্ষকের বদলির আবেদন বছরের পর বছর আটকে রাখা একপ্রকার অন্যায় ও অমানবিকতা। মাননীয় আদালত এই বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্বজ্ঞানহীনতার বিরুদ্ধে যথাযথ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন এবং নিশ্চিত করেছেন যে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা হবে। আমি বিশ্বাস করি, এই রায় শিক্ষাক্ষেত্রে যেকোনো প্রশাসনিক জটিলতার আড়ালে শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার ক্ষুণ্ন হতে দেবে না। আদালতের এই নির্দেশ যথাযথভাবে কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আমি আশাবাদী।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments