নিউজ ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের সুপারিশ উপেক্ষা করে হাওড়ার শংকরাইল আজিজিয়া জুনিয়র গার্লস হাই মাদ্রাসা (ইউনিট ২)-এর প্রধান শিক্ষিকা জেসমিন বেগম ও রুপা খাতুনকে রিলিজ অর্ডার না দেওয়ায় হস্তক্ষেপ করলেন মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট। গত ৫ মার্চ, বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে ৭ দিনের মধ্যে জেসমিন বেগমের রিলিজ অর্ডার ইস্যুর নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় রাজ্যের সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মহলে প্রশ্ন উঠেছে: মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের সুপারিশ অমান্য করার সাহস পেল কীভাবে একটি মাদ্রাসা? প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তায় কি ধ্বংস হচ্ছে কমিশনের কর্তৃত্ব?
কী ঘটেছিল?
২০২৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ কেন্দ্রীয় মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের জেনারেল ট্রান্সফার প্রক্রিয়ায় ২,৮৩১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা অংশ নেন। এর মধ্যে ৬১১ জনকে সুপারিশপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু সুপারিশ সত্ত্বেও জেসমিন বেগমকে পাণ্ডুয়া সুলতানিয়া হাই মাদ্রাসা এবং রুপা খাতুনকে দাবরা হাই মাদ্রাসাতে বদলিতে বাধা দেয়। বারবার আবেদন ও অভিযোগ (মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তর, কমিশন, মাদ্রাসা বোর্ড, এমনকি নবান্নে পর্যন্ত) করেও নিষ্ক্রিয়তা দেখায় কর্তৃপক্ষ। শেষমেশ আদালতের শরণাপন্ন হন জেসমিন।
“আমার শিশু সন্তান দরজার দিকে চেয়ে থাকে…”
আদালতের নির্দেশে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন জেসমিন বেগম। তাঁর বক্তব্য, “এই লড়াই শুধু আমার নয়, সব মহিলা শিক্ষকদের। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ শিক্ষক ঘাটতির অজুহাত দেখিয়ে আমাদের আটকাতে পারে না। শিক্ষকতার পাশাপাশি আমাদের পরিবারও আছে। রাত ৮টায় বাড়ি ফিরলে আমার শিশু সন্তান শুধু দরজার দিকে চেয়ে থাকে… এই বিজয়ে আমার স্বামী, মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্য মঞ্চ, নাসিরুদ্দিন মণ্ডল, জসিমউদ্দিন মিদ্যা স্যারের অবদান অনস্বীকার্য।”
আদালতের যুক্তি ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা
গত বছর ডিসেম্বরে আদালত প্রথমে বার্ষিক পরীক্ষা ও রেজাল্ট প্রকাশের কথা ভেবে রিলিজ অর্ডার স্থগিত রাখে। কিন্তু মাদ্রাসার অবাধ্যতা ও প্রশাসনের চুপসে থাকায় শেষমেষ কঠোর হন বিচারপতি ভট্টাচার্য। মুখ্য আইনজীবী শেখ শাহাজান আলীর যুক্তি ছিল—”সার্ভিস কমিশনের সুপারিশ আইনত বাধ্যতামূলক। কোনো মাদ্রাসা এড়িয়ে যেতে পারে না।”
বুদ্ধিজীবী মহলে ক্ষোভ: “কমিশন কী তবে কাগুজে বাঘ?”
এই ঘটনায় সংখ্যালঘু সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, “একটি মাদ্রাসা যদি কমিশনের নির্দেশ অমান্য করে, তাহলে ভবিষ্যতে অন্যরাও সেই সাহস পাবে। প্রশাসন যদি দ্রুত ব্যবস্থা নিত, আদালত পর্যন্ত যেতে হতো না।” অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরে কি নিষ্ক্রিয় আধিকারিকরা দায়িত্ব পালন করছেন?
জেসমিনের বিশ্বাস: “সংবিধানই শেষ ভরসা”
জেসমিন বেগমের কথায়, “ভারতীয় সংবিধান ও বিচারব্যবস্থায় আমার আস্থা ছিল। জানতাম, ন্যায় পাবই।” তাঁর লড়াই শুধু ব্যক্তিগত নয়, প্রাতিষ্ঠানিক স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে এক মাইলফলক। মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের সুপারিশ যেন ভবিষ্যতে সম্মান পায়, তা নিশ্চিত করার দায় এখন প্রশাসনের।