অসাধারণ: অভাবকে জয় করে WBCS গ্রুপ A পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে তাক লাগলেন প্রিয়তোষ

577

WBCS ফলাফল, ১০ জুন ২০২৫: তীব্র অর্থকষ্ট আর সংসারের অনটনকে জয় করে অবিশ্বাস্য অধ্যবসায়ের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিসে (ডব্লুবিসিএস এক্সিকিউটিভ) সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন ডায়মন্ড হারবারের মেধাবী যুবক প্রিয়তোষ পিপলাই। তাঁর এই সাফল্যে খুশির হাওয়া বইছে পুরো এলাকাজুড়ে।

ডায়মন্ড হারবার পুরসভার নয় নম্বর ওয়ার্ডের বিদ্যাসাগর পল্লিতে মা মৌসুমি পিপলাইয়ের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকেন ২৯ বছরের প্রিয়তোষ। তাঁর সাফল্যের পথ মোটেই মসৃণ ছিল না। শৈশবেই বাবা তপন পিপলাইকে হারানোর পর পরিবারে চরম আর্থিক সংকট নেমে আসে। মাত্র পাঁচ বছর বয়সী প্রিয়তোষকে নিয়ে জীবনসংগ্রামে নামতে হয় মা মৌসুমিকে। গৃহশিক্ষকতা করে তিনি ছেলের পড়াশোনা ও সংসার চালিয়েছেন।

ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন প্রিয়তোষ। সরিষার রামকৃষ্ণ মিশন শিক্ষামন্দির থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক (বিজ্ঞান বিভাগ) পাস করার পর তিনি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য তিনি ২০১৪ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ২০১৭ সালে শিক্ষকতা শুরু করেন। এ সময়েই তিনি নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (নেতাজি সুভাষ ওপেন ইউনিভার্সিটি) থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

পড়ুন:  WBPSC MVI: খুব ভালো খবর চাকরি প্রার্থীদের জন্য, মোটর ভেহিকেল ইন্সপেক্টর নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ!

প্রিয়তোষের সিভিল সার্ভিসে পদযাত্রা শুরু হয় ২০২১ সালে, যখন তিনি ডব্লুবিসিএস (গ্রুপ-সি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ২০২৪ সালে তিনি ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট কমার্শিয়াল ট্যাক্স অফিসার’ হিসেবে কলকাতার বেলেঘাটায় যোগদান করেন। এর পরও লক্ষ্য স্থির রেখে ২০২২ সালে তিনি আবারও ডব্লুবিসিএস (এক্সিকিউটিভ) পরীক্ষায় বসেন। সম্প্রতি প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, তিনি এই পরীক্ষায় সমগ্র রাজ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন।

পড়ুন:  WBPSC নিয়োগ পরীক্ষার ক্যালেন্ডার 2025 প্রকাশিত হয়েছে: এখানে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার সময়সূচী দেখুন

রবিবার সকাল থেকেই তাঁর প্রথম স্থান অধিকারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই বন্ধু, আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের ভিড় জমে যায় তাঁর বাড়িতে। শুভেচ্ছা জানাতে আসেন অনেকে।

মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা: নিজের সাফল্যের সমস্ত কৃতিত্ব মা মৌসুমিকে দিতে চান প্রিয়তোষ। তিনি বলেন, “খুবই ভালো লাগছে। আশা ছিল ভালো ফল করব, তবে প্রথম হব ভাবিনি। আমার সফলতার পিছনে একমাত্র অবদান আমার মায়ের। অনেক বাধা-বিপত্তি এসেছে, কিন্তু ধৈর্যচ্যুত হইনি। পড়াশোনার পাশাপাশি গান শোনা, ক্রিকেট খেলা, সিনেমা দেখা বা গল্পের বই পড়া – কিছুই বাদ দিইনি। তবে নিয়ম করে পড়েছি।”

পড়ুন:  অসাধারণ: কোনো কোচিং ছাড়াই WBCS গ্রুপ A আধিকারিক হয়ে চমক দেখালেন অনিমেষ

ছেলের সাফল্যে গর্বিত মা মৌসুমি পিপলাই বলেন, “অনেক অভাব-অনটনের মধ্যেই ছেলেকে বড় করেছি। কিন্তু ও কখনও হাল ছাড়েনি, পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে নিরন্তর। ছেলের জন্য আমি সত্যিই গর্বিত।”

প্রিয়তোষ পিপলাইয়ের এই অসাধারণ কৃতিত্ব শুধু ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, দারিদ্র্য ও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে লক্ষ্যে পৌঁছানোর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর সাফল্য অনুপ্রেরণা জোগাবে অসংখ্য মেধাবী তরুণ-তরুণীকে।