তবে কি মুসলিমদেরও হিন্দু সম্পত্তি বোর্ডের সদস্য হতে দেওয়া হবে? স্থগিতাদেশে ভাবনা! ওয়াকফ নিয়ে বিরাট প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের

2438
প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না

নিউজ ডেস্ক: আজ, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, সুপ্রিম কোর্টে বিতর্কিত ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন, ২০২৫ নিয়ে একগুচ্ছ মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এই মামলাগুলি পর্যালোচনা করেন। নিচে আজকের শুনানির মূল বিষয়গুলি তুলে ধরা হলো:  

১. শুনানির অবস্থা ও পরবর্তী তারিখ

– সুপ্রিম কোর্ট আজ কোনো অন্তর্বর্তী আদেশ দেয়নি। শুনানি স্থগিত রেখে আগামীকাল ১৭ এপ্রিল, দুপুর ২টায় পুনরায় শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।  

– মোট ৭৩টি মামলা একত্রিত করে শুনানি করা হচ্ছে, যেগুলি কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিআই(এম), এআইএমআইএম এবং বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের পক্ষ থেকে দায়ের করা হয়েছে ।  

– ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে এবার সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে কেন্দ্র। পরিস্থিতি এমনই যে, কেন্দ্রের আইন অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশও জারি করে দিতে পারে শীর্ষ আদালত। এদিন সুপ্রিম কোর্ট সেই ইচ্ছা প্রকাশ করলেও আরও একদিন সময় চেয়েছেন কেন্দ্র সরকারের আইনজীবি। 

– প্রধান বিচারপতির আইনজীবী মেহতাকে প্রশ্ন, ‘‘এখন থেকে কি মুসলিমদেরও হিন্দু সম্পত্তি বোর্ডের সদস্য হতে দেওয়া হবে?’’

পড়ুন:  গরমের দীর্ঘ ছুটি নিয়ে বড় পরিবর্তন, ছুটির নিয়মে বড় পরিবর্তন আনল দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট

২. আদালতের গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য

– ওয়াকফ বাই ইউজার বাতিল নিয়ে প্রশ্ন: আদালত জানায়, “১৯৪০ সাল থেকে চলে আসা ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ প্রথা হঠাৎ বাতিল করা যুক্তিসঙ্গত নয়। অনেক প্রাচীন ধর্মীয় স্থানের কোনো লিখিত দলিল নেই, কিন্তু সেগুলি ঐতিহ্যগতভাবে ওয়াকফ হিসেবে স্বীকৃত” ।  

– হিংসার নিন্দা: প্রধান বিচারপতি হিংসার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকার সময় সহিংসতা অগ্রহণযোগ্য” ।  

৩. বিতর্কিত বিষয়গুলি

– ওয়াকফ বোর্ডে অ-মুসলিম সদস্য: নতুন আইনে ওয়াকফ বোর্ডে অন্তত দু’জন অ-মুসলিম সদস্য রাখার বিধান নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। আইনজীবী কপিল সিবাল যুক্তি দেন যে এটি সংবিধানের ২৬ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করে।  

সুপ্রিম কোর্ট সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রশ্ন করেছে, হিন্দুদের কোনও ধর্মীয় অছি পরিষদ বা ট্রাস্টে কেন্দ্রীয় সরকার কি কোনও মুসলমানকে সদস্য হওয়ার অনুমতি দেবে?

– জেলাশাসকের ক্ষমতা: নতুন আইনে জেলাশাসকরা ওয়াকফ সম্পত্তি নির্ধারণ করতে পারবেন, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে যে এটি প্রশাসনিক পক্ষপাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে ।  

পড়ুন:  8ম বেতন কমিশন: সরকারি কর্মীদের বাম্পার বেতন বাড়বে, জেনে নিন কোন স্তরে কত বেতন বাড়বে

৪. কেন্দ্রের অবস্থান

– কেন্দ্রের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেছেন যে এই সংশোধনী ওয়াকফ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনার জন্য প্রয়োজনীয় এবং সংসদে ৩৮টি বৈঠক ও ৯৮ লক্ষ স্মারকলিপি পর্যালোচনা করে এটি পাস করা হয়েছে ।  

৫. পরবর্তী পদক্ষেপ 

আগামীকালের শুনানিতে আদালত নিম্নলিখিত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করতে পারে:  

– ওয়াকফ বাই ইউজার ধারা পুনর্বহালের সম্ভাবনা ।  

– আইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ । 

শীর্ষ আদালত অন্তর্বর্তী রায় দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আরও একদিন সময় চাওয়া হয়। তার আগে আদালত প্রস্তাব দিয়েছিল, ইতিমধ্যেই আদালত যে সমস্ত সম্পত্তিক ওয়াকফ ঘোষণা করেছে, তাতে কোনও পরিবর্তন ঘটানো যাবে না আপাতত। ওয়াকফ বোর্ড এবং কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কমিটির সমস্ত সদস্য মুসলিম হতে হবে, ব্যতিক্রম শুধু পদের দৌলতে বোর্ডের সদস্যপদ পাওয়া ব্যক্তিরা। শুধু তাই নয়, হিন্দুদের দাতব্য ট্রাস্টে মুসলিমদের জায়গা দেওয়া হবে কি, কেন্দ্রের কাছে জানতেও চায় শীর্ষ আদালত। 

পড়ুন:  বিরাট খবর! তবে কি ফের বাড়ছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ভাতার টাকা? বড় ঘোষণা খোদ মুখ্যমন্ত্রীর

বুধবার ওয়াকফ আইন নিয়ে শুনানি চলাকালীন কেন্দ্রের আইন নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলে আদালত। ওয়াকফ বোর্ডের ২২ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ৮ জন কেন মুসলিম, প্রশ্ন তোলা হয়। এতে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার সঙ্গে কার্যত বাগযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার। সেই নিরিখে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চে মামলার শুনানি হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন মেহতা। এতে প্রধান বিচারপতি বলেন, “বিচারপতির আসনে যখন বসি আমরা, ধর্ম থাকে না আমাদের। আমাদের কাছে সবপক্ষই সমান।” এর পরই CJI জানতে চান, “তার মানে কি বলতে চাইছেন, হিন্দুদের দাতব্য ট্রাস্টের বোর্ডে মুসলিমদের জায়গা হবে? প্রকাশ্যে বলুন।” প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, “২৬ নং ধারা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে। এটা সব সম্প্রদায়ের জন্য প্রযোজ্য।”

আজকের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনের জটিল দিকগুলি নিয়ে প্রশ্ন তুললেও কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। আগামীকালের শুনানিই এই বিতর্কের দিকনির্দেশনা স্থির করতে পারে। বিরোধী দলগুলি আইনটি বাতিলের দাবি করলেও কেন্দ্রীয় সরকার এর পক্ষে জোরালো যুক্তি দিচ্ছে।