নিউজ ডেস্ক: নর্থ বেঙ্গল পার্ট টাইম টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহাশয়কে একটি স্মারকলিপি প্রদান করলেন সংগঠনের সভাপতি সুশান্ত সরকারের নেতৃত্বে রাজ্য সহ-সভাপতি সুমিত ব্যানার্জি এবং বাঁকুড়া জেলা সহ-সম্পাদক জয়জিত বাবু। রাজ্যের সমস্ত উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির অস্থায়ী পার্ট টাইম শিক্ষক শিক্ষিকাদের আর্থিক দায়িত্ব স্কুল ফান্ডের পরিবর্তে সরকারকে দ্রুত গ্রহণ করার অনুরোধ এবং 60 বছর পর্যন্ত কাজের স্বীকৃতি প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীকে তার OSD-এর মাধ্যমে বিকাশ ভবনে স্মারকলিপিটি প্রদান করা হয়েছে।
দীর্ঘ ৮ বছর ধরে SSC নিয়োগ বন্ধ থাকায় রাজ্যের প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়েই প্রবল শিক্ষক ঘাটতি দেখা দেওয়ায় বিদ্যালয়গুলির পঠন-পাঠন সচল রাখার জন্য বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটিগুলি স্কুল ফান্ড থেকে অস্থায়ী পার্ট টাইম শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগ করেছিল। উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ২০১২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার ম্যানেজিং কমিটির অস্থায়ী পার্ট টাইম শিক্ষক শিক্ষিকা রাজ্যের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নিযুক্ত রয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যের বিপুল সংখ্যক মাধ্যমিক স্কুলগুলিকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু 2016 সালের পর থেকে নতুন করে কোন SSC নিয়োগ না হওয়ায় রাজ্যের প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পঠনপাঠন সচল রয়েছে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির অস্থায়ী পার্ট টাইম শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্যই।
ম্যানেজিং কমিটির উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পার্ট টাইম শিক্ষক শিক্ষিকারা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফাইনাল পরীক্ষার খাতাও দেখে থাকেন। তাই সরকার সময়মতো উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশিত করতে পারে। অথচ সরকার তাদের এক টাকাও বেতন প্রদান করে না, তারা স্কুল ফান্ড থেকে প্রতি মাসে ৫০০-৩,০০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক সান্মানিক পেয়ে থাকেন। বিদ্যালয়ে স্থায়ী শিক্ষক এলে তাদেরকে স্কুল থেকে অমানবিকভাবে বাদ দেয়া হয় যা একপ্রকার বঞ্চনা ও রাষ্ট্রীয় শোষণ।
বিষয়টি নিয়ে বিদ্যাসাগর ভবনে পুনরায় উচ্চ মাধ্যমিক কাউন্সিলের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য মহাশয়ের সঙ্গেও আলোচনায় বসা হয়। তিনি বিষয়টি স্কুল এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ২০১৯ সালে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মহাশয়া কলেজের অতিথি শিক্ষকদের আর্থিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ৬০ বছর পর্যন্ত কাজের নিশ্চয়তা প্রদান করলেও এখনো পর্যন্ত বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির অস্থায়ী পার্ট টাইম শিক্ষক শিক্ষিকাদের আর্থিক দায়িত্ব তিনি গ্রহণ করেননি।
সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সুশান্ত সরকার চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন,” শিক্ষামন্ত্রী মহাশয় ও মুখ্যমন্ত্রী মহাশয়াকে একাধিকবার স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে এর পরও সরকার অতি দ্রুত বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির পার্টটাইম শিক্ষক শিক্ষিকাদের আর্থিক দায়িত্ব গ্রহণ না করলে তারা রাজ্যের সমস্ত বিদ্যালয় অচল করতে যেমন বাধ্য হবেন, তেমনি এবার অভিনব আন্দোলনের মাধ্যমে কলকাতার রাজপথ অবরুদ্ধ করা হবে।”
রাজ্য সহ-সভাপতি সুমিত ব্যানার্জি রাজ্যের সমস্ত অস্থায়ী পার্ট টাইম শিক্ষক শিক্ষিকাদেরকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা আগামী ডিসেম্বরে সমস্ত বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে কলকাতার রাজপথে আন্দোলনে নামবো।”
পূজোর ছুটিতে শিক্ষকদের আর টানা ছুটি নয়, অনলাইন ক্লাসের নির্দেশ ঘিরে প্রশ্ন শিক্ষক মহলে
সংগঠনের সহ-সভাপতি আশরাফুল মন্ডল বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করার পর SSC নিয়োগের পর কি পরিচয়ে বাঁচব, কিভাবে চলবে আমাদের পরিবার! সরকারকে বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখা উচিত।”
সংগঠনের দক্ষিন বঙ্গের রাজ্য সম্পাদক তারক জানা জানান “আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে, সরকার দ্রুত কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা শেষ হলেই আমরা কলকাতার রাজপথ অবরুদ্ধ করতে বাধ্য হব।” সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক শুভ্রা ঘোষ জানান, “রাজ্যে ম্যানেজিং কমিটির পার্ট টাইম শিক্ষকদের প্রায় ১৫ হাজার পরিবার আজ সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে, আশাকরি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মহাশয়া আমাদের সংকটমোচনে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।”