তবে কি দিলীপ ঘোষ কি তৃণমূলে যোগ দেবেন?বিজেপি নেতার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তারিত জানুন

661

নিউজ ডেস্ক: গতকাল ৩০ এপ্রিল, ২০২৫-এ দিঘার জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের সূত্রপাত করেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপির অভ্যন্তরে তীব্র ক্ষোভের পাশাপাশি তৃণমূলে যোগদানের জল্পনাও জোরালো হচ্ছে। তবে বাস্তবতা কতটা? বিশদে জানুন।

ঘটনার পটভূমি

দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দিলীপ ঘোষ স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদারকে নিয়ে অংশ নেন এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা আলোচনায় মিলিত হন। এই সাক্ষাতের সময় দুজনের মধ্যে ধর্মীয় ও সামাজিক বিষয়ে কথোপকথন হয়, যা মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। দিলীপ মন্দিরের স্থাপত্য প্রশংসা করেন এবং মমতা মন্দির নির্মাণের চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেন।  

বিজেপির অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ

দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশ উপেক্ষা করে দিলীপের এই সিদ্ধান্তে বিজেপির অন্দরে প্রতিক্রিয়া তীব্র:  

পড়ুন:  SSC শিক্ষক নিয়োগ: উচ্চ প্রাথমিকের শূন্যপদ নিয়ে বিভ্রান্তি, বাতিল বহু স্কুল, বিকাশ ভবন সূত্রে যা জানা গেল

১. সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য: রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এটিকে “ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত” বলে উল্লেখ করে দলীয় সমর্থন নেই জানান ।  

২. সৌমিত্র খাঁ ও তরুণজ্যোতি তিওয়ারির সমালোচনা: সৌমিত্র খাঁ দিলীপকে “লজ্জা” বলে আখ্যায়িত করেন, অন্যদিকে তরুণজ্যোতি তিওয়ারি সরকারি অর্থব্যয়ে নির্মিত মন্দিরে মমতার পাশে বসাকে সমর্থন করেননি।

৩. শুভেন্দু অধিকারীর অনুপস্থিতি: বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই অনুষ্ঠান বয়কট করে কন্টাইয়ে সনাতনী সম্মেলনের আয়োজন করেন ।  

তৃণমূলে যোগদানের গুঞ্জন: বাস্তবতা কী?  

দিলীপের এই সফরকে ঘিরে তৃণমূল যোগদানের জল্পনা উঠলেও, প্রাসঙ্গিক দিকগুলি হলো:  

– দিলীপের স্পষ্ট বক্তব্য: তিনি বারংবার জানিয়েছেন, “মন্দির দর্শন আমার ধর্মীয় অধিকার, রাজনীতির সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই” । এছাড়া, “তৃণমূলে যাওয়া রাজনৈতিক অবনমন” বলে মন্তব্য করেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র ।  

পড়ুন:  ৭৮-০: তছনছ শুভেন্দু অধিকারী মিথ! বিজেপিকে পর্যদুস্ত করে বিপুল জয় তৃণমূলের

– অতীতের বৈরিতা: দিলীপ ঘোষ মমতা সরকারকে “হিন্দুশূন্য” করার অভিযোগ তোলাসহ ওয়াকফ আইন ও মুর্শিদাবাদের সহিংসতার জন্য দায়ী করেছেন । সম্প্রতি মমতার অক্সফোর্ড বক্তৃতাকে “মিথ্যা” বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি ।  

– বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ: রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, দিলীপের এই পদক্ষেপ বিজেপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত দিলেও, তৃণমূলের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা কম। তাঁর আদর্শিক অবস্থান এবং মমতার প্রতি সমালোচনামুখর ভূমিকা তা অসম্ভব করে তোলে।

দিলীপ ঘোষের ভবিষ্যৎ: কী বলছে ইঙ্গিত?  

– দলীয় অবস্থান: বিজেপির জাতীয় সহ-সভাপতি হিসেবে দিলীপের ভূমিকা এখনও গুরুত্বপূর্ণ, তবে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে মতপার্থক্য স্পষ্ট ।  

– নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা: তিনি সম্প্রতি জানিয়েছেন, বাংলায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি হওয়ার যোগ্যতা হলো “জঙ্গি আন্দোলন” করার ক্ষমতা, যা মমতার রাজনৈতিক কৌশলের সঙ্গে তুলনীয় ।  

পড়ুন:  SSC: শিক্ষক পদে যোগদান করতে গিয়ে হয়রানির অভিযোগ, সমস্যা সমাধানে নয়া বিজ্ঞপ্তি দিল এসএসসি

– ধর্মীয় vs রাজনৈতিক: দিলীপের মতে, “মন্দির প্রাঙ্গণে রাজনৈতিক বিভেদ বেমানান” , যা তাঁর এই সফরকে ব্যক্তিগত বিশ্বাসের প্রতিফলন হিসাবে উপস্থাপন করে।  

উপসংহার: সময়ই বলবে উত্তর  

বর্তমান প্রেক্ষাপটে দিলীপ ঘোষের তৃণমূলে যোগদানের কোনো প্রমাণ নেই। গুঞ্জনগুলিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের তৈরি বিভ্রান্তি বা মিডিয়া স্পেকুলেশন বলেই মনে করা হচ্ছে । তবে বাংলার উত্তাল রাজনীতিতে দিলীপের মতো প্রভাবশালী নেতার ভূমিকা নির্ভর করছে দলীয় নেতৃত্বের পরবর্তী সিদ্ধান্ত এবং তাঁর নিজের রাজনৈতিক কৌশলের ওপর। আগামী দিনে যদি দলত্যাগের কোনো সংকেত আসেও, তা হবে রাজ্য রাজনীতির বড় মোড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত।