নিউজ ডেস্ক: আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে ওবিসি শংসাপত্র ব্যবহার করে নিয়োগপ্রক্রিয়া চালানোর অভিযোগে এদিন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের ‘ভুল’ স্বীকার ও জবাবদিহিতার মুখে পড়ল রাজ্য প্রশাসন। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানিতে ভার্চুয়ালি হাজিরা দিয়ে বিচারপতিদের তিরস্কার শুনতে হয় তাঁকে। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ মুখ্যসচিবকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ স্পষ্ট থাকার পরেও কীভাবে এই নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হলো? রাজ্য সরকার বা আপনারই কি নিয়ন্ত্রণ নেই?’’
গত সেপ্টেম্বরে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ওবিসি শংসাপত্র সংক্রান্ত নির্দেশিকা সব দপ্তরে পাঠানো হয়েছিল বলে জানান মুখ্যসচিব। তবে এদিন তিনি স্বীকার করেন, ‘‘এটি একটি ভুল। ভবিষ্যতে এমনটি আর ঘটবে না।’’ আদালতকে আশ্বস্ত করেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগতভাবে এই বিষয়ে নজরদারি বাড়াব।’’
কী ছিল আদালতের নির্দেশ?
ওবিসি শংসাপত্রের বৈধতা নিয়ে চলমান বিতর্কের প্রেক্ষাপটে উচ্চ আদালত আগেই স্পষ্ট করেছিল যে ২০১০ সালের পূর্বে জারি করা শংসাপত্রধারীদের নিয়োগে বাধা নেই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ কো-অপারেটিভ সোসাইটির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আদালতের এই নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। শুধু তাই নয়, আদালতের স্টে থাকা সত্ত্বেও নিয়োগের জন্য প্যানেলও প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। এর ভিত্তিতেই আদালত অবমাননার মামলায় শুনানির সময় মুখ্যসচিবকে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়।
‘আপনার লোকেরাই আপনাকে মানছে না’
বিচারপতি মান্থা অভিযোগের তীব্রতা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশের দায় আমাদের ঘাড়ে চাপাবেন না। বলবেন না যে আমরা চাকরিতে বাধা সৃষ্টি করেছি।’’ তিনি আরও কঠোর ভাষায় যোগ করেন, ‘‘আপনি রাজ্যের সর্বোচ্চ আধিকারিক। আপনার অধীনস্তরাই আপনার নির্দেশ মানছে না—এটা আমাদের কাছে হতাশাজনক। আপনাকে আদালতে হাজিরা করানোও দুঃখের।’’
কী বললেন মুখ্যসচিব?
বিচারপতিদের সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যসচিব বারবার ‘ভুল’ স্বীকার করে নিয়োগপ্রক্রিয়ায় সতর্কতা ও আদালতের নির্দেশ প্রতিপালনের আশ্বাস দেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সমস্ত দপ্তরে নির্দেশ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে কোনো ফাঁকফোকর রাখা হবে না।’’
পটভূমি
রাজ্যে ওবিসি সংরক্ষণ বিতর্ক দীর্ঘদিনের। উচ্চ আদালত পূর্বে রায় দিয়েছিল, ২০১০ সালের পর রাজ্য সরকারের জারি করা ওবিসি শংসাপত্র বাতিল। কিন্তু গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি নিয়োগে এই শংসাপত্র ব্যবহারের অভিযোগে আদালতের মুখোমুখি হয়েছে প্রশাসন। বিশেষত, কো-অপারেটিভ সোসাইটির ঘটনায় আদালতের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে বলেই আইনজীবীদের অভিমত।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া ব্যাখ্যা ও মুখ্যসচিবের ‘ভুল’ স্বীকারোক্তি এখন প্রশ্ন তুলেছে প্রশাসনিক দায়িত্বশীলতা ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা নিয়ে। উচ্চ আদালতের সতর্কবার্তা সত্ত্বেও নির্দেশ অমান্যের পুনরাবৃত্তি রোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা এখন দেখার বিষয়।