Home দক্ষিণবঙ্গ অসাধারণ: রজতজয়ন্তীতে মরণোত্তর দেহ ও অঙ্গদানের অঙ্গীকারে শিক্ষক দম্পতির অনন্য উদ্যোগ

অসাধারণ: রজতজয়ন্তীতে মরণোত্তর দেহ ও অঙ্গদানের অঙ্গীকারে শিক্ষক দম্পতির অনন্য উদ্যোগ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বিবাহের ২৫ বছর পূর্তিতে সমাজসেবায় নজির স্থাপন

317

পূর্ব মেদিনীপুর, পাঁশকুড়া: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মাহাত্ম্যকে স্বরণীয় করে তোলার পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনের এক গৌরবময় মাইলফলককে সামনে রেখে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন গোপালনগর বিহারীলাল বিদ্যাপীঠের সহকারী শিক্ষক অমলকান্তি বর ও তাঁর সহধর্মিনী মোনালিসা চক্রবর্তী বর। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ দম্পতি নিজেদের বিবাহের রজতজয়ন্তী (২৫ বছর) পূর্ণ করেন। এই বিশেষ দিনে তাঁরা মরণোত্তর দেহদান ও অঙ্গদানের অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষর করে সমাজকল্যাণে অনুকরণীয় অবদান রাখলেন।  

পাঁশকুড়া পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের নারান্দা এলাকার বাসিন্দা অমলকান্তি বর দীর্ঘকাল ধরে শিক্ষাক্ষেত্রে নিবেদিত প্রাণ। স্থানীয় গোপালনগর বিহারীলাল বিদ্যাপীঠে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত তিনি। দীর্ঘ ২৫ বছরের বৈবাহিক জীবনে দম্পতি সমাজসেবা ও মানবকল্যাণে নিয়মিত ভূমিকা রেখেছেন। এবার তাঁদের সিদ্ধান্ত আরও ব্যতিক্রমী—মৃত্যুর পর চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণা ও প্রয়োজনে দেহদান এবং অঙ্গদান।  

এই প্রসঙ্গে অমলকান্তি বর জানান, “আমাদের বিবাহবার্ষিকী এবং মাতৃভাষা দিবস—উভয়ই চেতনা ও মিলনের প্রতীক। এই দিনে দেহদানের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা গর্বিত। মৃত্যুর পরও যেন আমাদের দেহ সমাজের কাজে লাগে, এটাই কামনা।” সহধর্মিনী মোনালিসা চক্রবর্তী যোগ করেন, “অঙ্গদানের মাধ্যমে কাউকে নতুন জীবন দান করাই আমাদের লক্ষ্য। এই উদ্যোগে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবেন বলে আশা রাখি।”  

দেহ ও অঙ্গদানের মতো সংবেদনশীল সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে স্থানীয় সমাজ। পাঁশকুড়া পৌরসভার এক আধিকারিক মন্তব্য করেন, “এমন মহৎ উদ্যোগ সামাজিক দায়বদ্ধতার নতুন মাত্রা যোগ করে। শিক্ষক দম্পতির এই প্রচেষ্টা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।”  

পড়ুন:  অসাধারণ: মুখ দিয়েই কম্পিউটার চালান! ৫০ লক্ষের চাকরি ছেড়ে খড়্গপুর আইআইটি থেকে ডিগ্রির প্রস্তুতি তুহিনের

উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ডিহিউম্যানাইজেশন অফ ডেথ অ্যাক্ট, ১৯৮৫ এবং ট্রান্সপ্লান্টেশন অফ হিউম্যান অর্গ্যান্স অ্যাক্ট, ১৯৯৪-এর অধীনে দেহ ও অঙ্গদানের প্রক্রিয়া নিয়মিত করা হয়েছে। চিকিৎসা মহল জানিয়েছে, এমন উদ্যোগ চিকিৎসাশাস্ত্রের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।  

স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী ও সহকর্মীরা এই দম্পতির সিদ্ধান্তকে “সমাজের জন্য মাইলস্টোন” বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের এই পদক্ষেপ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মানবতা ও বৈজ্ঞানিক চেতনায় উৎসাহিত করবে বলে সকলের বিশ্বাস।