নিউজ ডেস্ক: হয়েছে পর্দাফাঁস! ইন্দোরের পর্যটক রাজা রঘুবংশী হত্যা মামলায় মেঘালয় পুলিশ একটি বড় সাফল্য অর্জন করেছে, এই অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তার ‘নিখোঁজ’ স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রেম ঘটিত কারণেই এই হত্যা বলে পুলিশি তদন্তে উঠে আসছে।
ইনদৌরের যুবককে ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে হত্যা করিয়েছে তাঁর নিজেদের স্ত্রীই। সোমবার উত্তর প্রদেশের গাজিপুর থেকে পাওয়া যায় ২৪ বছর বয়সী সোনমকে। জানা যাচ্ছে তিনি পুলিশের কাছে ধরা দিয়েছেন। ইন্ডিয়া টুডে টিভিতে প্রকাশ, পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে জানা গিয়েছে, রাজ কুশওয়াহা নামে অন্য একজনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সোনমের। কিন্তু বিয়ে হয় রাজা রঘুবংশীর সঙ্গে। অভিযোগ, এরপরই সেতার স্বামীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে ফেলে। মেঘালয়ের হানিমুনে গিয়েই যে প্রাণে মেরে ফেলা হবে রাজাকে, তার নীল-নকশাও করে ফেলা হয়। এরপর কয়েকদিন একসঙ্গে কাটানোর পর মনোরম অঞ্চল সোহরায় গিয়ে রাজাকে মেরে খাদে ফেলে দেওয়া হয়। নিখোঁজ হওয়ার কয়েকদিন পরই তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশের দাবি, এই কাজটি করাতে মধ্যপ্রদেশ থেকে কন্ট্রাক্ট কিলারদের ভাড়া করেছিল সোনম।
গত মাসে নবদম্পতি মেঘালয়ে হানিমুনে আসেন। ২৩ মে থেকে নিখোঁজ ছিলেন তাঁরা। এরপর একজন ট্যুরিস্ট গাইডের বয়ানে সন্দেহ হয় পুলিশের। তিনি জানান, নবদম্পতিকে শেষবার যখন দেখা গিয়েছিল, সঙ্গে ছিল আরও তিনজন পুরুষও। ঘটনার প্রায় ১০ দিন পর, ২ জুন, রাজার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। সোনমের তখন কোনও খোঁজ মেলেনি। সকলে নানারকম খারাপ আশঙ্কা করতে থাকেন। এই সব জল্পনার মধ্যে তদন্তের বিরাট সূত্র মেলে, সোনমের একটি ফোন থেকে। অতি সম্প্রতি গাজীপুর থেকে সোনম তার পরিবারকে একটি ফোন করে বলে জানা যায়। খবর ইন্ডিয়া টুডে-তে। সেই সূত্র ধরে তদন্ত এগোতেই আসে সাফল্য । ধাপে ধাপে পুরো বিষয়টা এক্কেবারে পরিষ্কার হয়ে যায় পুলিশের কাছে। পরিবার ফোন পাওয়ার কথা ইনদৌর পুলিশকে জানায়। তখনও তারা বোঝেনি এই অপরাধে নাটের গুরু তাদের মেয়েই। এরপরই পুলিশ তাকে গাজীপুর থেকে থুঁজে বের করে ও গ্রেফতার করে। কারণ তদন্তে তখন পরিষ্কার স্বামীকে সরিয়ে দেওয়ার প্ল্যান ছিল সোনমেরই। সেই অনুসারে সে-ই ভাড়াটে খুনিদের কাজে লাগায়।
মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের এক নববিবাহিত রাজা রঘুবংশী ২৩শে মে মেঘালয়ের মধুচন্দ্রিমায় পূর্ব খাসি পাহাড় এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পর তার মৃতদেহ একটি খাদে পাওয়া যায়, যদিও ধারণা করা হচ্ছিল যে তার স্ত্রী সোনম রঘুবংশী নিখোঁজ।
মেঘালয় পুলিশ সোমবার প্রকাশ করেছে যে তারা রাজা রঘুবংশীকে হত্যার জন্য ভাড়া করা তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। সোনম তার স্বামীকে হত্যার জন্য ভাড়া করা তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। উত্তরপ্রদেশের গাজীপুরের নন্দগঞ্জ থানায় স্ত্রী সোনম আত্মসমর্পণের পর তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মেঘালয়ের পুলিশের মহাপরিচালক আই নংরাং জানিয়েছেন, বিশেষ তদন্তকারী দলের (এসআইটি) গোয়েন্দারা মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে।
“উত্তরপ্রদেশের একজন অভিযুক্ত এবং মেঘালয় পুলিশের এসআইটি ইন্দোর থেকে আরও দুইজনকে আটক করেছে। গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্তরা আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেছে। তারা প্রকাশ করেছে যে ভুক্তভোগীর স্ত্রী তাদের ভাড়া করেছিলেন,” নোংরাং পিটিআইকে বলেন।
“অপরাধে জড়িত আরও কিছু ব্যক্তিকে ধরার জন্য মধ্যপ্রদেশে অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে,” তিনি বলেন।
মুখ্যমন্ত্রী কনরাড কে সাংমা রাজ্য এবং জাতিকে হতবাক করে দেওয়া মামলাটি ফাঁস করার জন্য পুলিশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
“৭ দিনের মধ্যে, #মেঘালয়পুলিশ রাজা হত্যা মামলায় একটি বড় সাফল্য অর্জন করেছে… মধ্যপ্রদেশের ৩ জন আততায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, মহিলা আত্মসমর্পণ করেছে এবং আরও একজন আততায়ীকে ধরার জন্য অভিযান এখনও চলছে… দারুন হয়েছে,” তিনি X-তে পোস্ট করেছেন।
রাজা রঘুবংশী হত্যা মামলা
রাজা রঘুবংশী এবং তার স্ত্রী সোনম উত্তর-পূর্ব রাজ্যে তাদের মধুচন্দ্রিমার সময় নিখোঁজ হয়েছিলেন, শেষবার ২৩শে মে দেখা গিয়েছিল। ২রা জুন, চেরাপুঞ্জির কাছে সোহরারিমে একটি গিরিখাতে রাজার মৃতদেহ পাওয়া যায়, যদিও সোনম ‘নিখোঁজ’ ছিলেন।
রাজার ভাই বিপুল রঘুবংশী গত সপ্তাহে এএনআইকে বলেন: আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সিবিআই তদন্তের অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি লিখেছি এবং কমিশনারের কার্যালয়ে জমা দিয়েছি। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সহায়তা করুন এবং এই বিষয়ে সিবিআই তদন্ত করা হোক। এতে রাজার বিচার হতে পারে এবং সোনমকে খুঁজে পাওয়া সহজ হবে। মেঘালয় পুলিশ যেভাবে এই মামলায় কাজ করছে, তাতে তারা রাজার বিচার পাবে না।”
গত সপ্তাহে, একজন ট্যুরিস্ট গাইড বলেছিলেন যে ইন্দোরের হানিমুন দম্পতি রাজা এবং সোনম মেঘালয়ের সোহরা এলাকায় নিখোঁজ হওয়ার দিন তাদের সাথে তিনজন পুরুষ ছিলেন।
মাওলাখিয়াত গাইড অ্যালবার্ট পেডে পিটিআইকে জানিয়েছেন যে ২৩শে মে সকাল ১০টার দিকে তিনি তিনজন পুরুষ পর্যটকের সাথে নংরিয়াত থেকে মাওলাখিয়াত পর্যন্ত ৩,০০০ সিঁড়ি বেয়ে উঠতে দেখেছেন।
তিনি আগের দিন নংরিয়াত পর্যন্ত তাদের গাইড করার প্রস্তাব দেওয়ার সময় দম্পতিকে চিনতে পেরেছিলেন, কিন্তু তারা বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং অন্য একজন গাইড নিয়োগ করেছিলেন।
“চারজন পুরুষ এগিয়ে যাচ্ছিলেন এবং মহিলাটি পিছনে ছিলেন। চারজন পুরুষ হিন্দিতে কথা বলছিলেন, কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি তারা কী বলছে কারণ আমি কেবল খাসি এবং ইংরেজি জানি,” পেডে বলেন।
তিনি আরও বলেন যে, ২২শে মে তিনি তাদের নংরিয়াতে গাইড করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা ভা ওয়ানসাই নামে আরেকজন গাইডকে ভাড়া করে, রাতভর শিপাড়া হোমস্টেতে থেকে যায় এবং পরের দিন গাইড ছাড়াই ফিরে আসে।
“আমি যখন মাওলাখিয়াত পৌঁছাই, তখন তাদের স্কুটারটি সেখানে ছিল না,” গাইড দাবি করেন।