রাজ্যের বিএড-ডিএলএড প্রতিষ্ঠান বন্ধের মুখে, কেন্দ্রীয় নীতিতে রাজ্যের ১২০০ শিক্ষক-শিক্ষণ কলেজের অস্তিত্ব সংকট

5917
UGC NET ইউজিসি নেট

নিউজ ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ও বেসরকারি বিএড ও ডিএলএড কলেজগুলির অস্তিত্ব একরকম মুছে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন নীতির কারণে এরাজ্যের প্রায় ১,২০০টি শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পথে। জাতীয় শিক্ষক শিক্ষণ পরিষদ (এনসিটিই)-এর সাম্প্রতিক খসড়া নীতিতে বলা হয়েছে, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয়ভিত্তিক ডিগ্রি কোর্স চালু না করলে এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে নতুন শিক্ষক শিক্ষণ কর্মসূচি (আইটিইপি) চালুর অনুমতি দেওয়া হবে না।  

নতুন নীতি ও কোর্সের রূপরেখা

এনসিটিই-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, শুধু শিক্ষক শিক্ষণের পরিবর্তে এখন থেকে বিএড-ডিএলএড কলেজগুলিকে বিএ, বিএসসি বা বিকমের মতো সাধারণ ডিগ্রি কোর্স চালু করতে হবে। ২০২৫ সাল থেকে চালু হতে যাওয়া ইন্টিগ্রেটেড টিচার এডুকেশন প্রোগ্রাম (আইটিইপি) হবে চার বছরের কোর্স, যা দ্বাদশ শ্রেণির পর পড়া যাবে। এটি বর্তমানের ডিএলএড এবং বিএডের সমতুল্য হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়া এক বছরের বিএড কোর্সও চালু হচ্ছে। তবে ২০৩০ সালের পর ডিএলএড কোর্স পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।  

পড়ুন:  পশ্চিমবঙ্গ: তবে কি DA বৃদ্ধির সঙ্গে ২০২৫ সালের শুরুতেই জোড়া সুখবর পাবেন এরাজ্যের সরকারি কর্মীরা? জেনেনিন

অবকাঠামো সংকট ও বন্ধের আশঙ্কা

এনসিটিই প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য জমি, ভবন, শিক্ষকসংখ্যা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার কঠোর মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে। বর্তমানে দেশের মাত্র ৬৫টি প্রতিষ্ঠান এই যোগ্যতা পূরণ করে। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব বিএড-ডিএলএড কলেজই সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী অবকাঠামো ও শিক্ষকের অভাবে নতুন শর্ত মানতে পারবে না। বিশেষ করে, রাজ্যের সরকারি কলেজগুলিতে ইতিমধ্যেই শিক্ষকসংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় ১০-১৫ জন কম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির অবস্থা আরও শোচনীয়। ফলে, ২০২৮ সালের মধ্যে মানদণ্ড পূরণ না করতে পারলে এই কলেজগুলির অনুমোদন বাতিল হওয়া অনিবার্য।  

পড়ুন:  পূজোর ছুটিতে শিক্ষকদের আর টানা ছুটি নয়, অনলাইন ক্লাসের নির্দেশ ঘিরে প্রশ্ন শিক্ষক মহলে

শিক্ষক মহলের উদ্বেগ

একাধিক শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞের মতে, বহুক্ষেত্রীয় কোর্স চালু করার নীতি বাস্তবসম্মত নয়। কলকাতার এক বিএড কলেজের অধ্যাপক বলেন, “বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের পর্যাপ্ত জমি বা সম্পদ নেই। ডিগ্রি কোর্স চালু করলে সাধারণ কলেজগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতাও বাড়বে।” এছাড়া আইআইটি-সহ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলিতেও শিক্ষক শিক্ষণ কোর্স চালু হওয়ায় ছোট কলেজগুলির টিকে থাকা কঠিন হবে।  

ভবিষ্যৎ প্রভাব

পড়ুন:  69000 শিক্ষক নিয়োগ: অবমাননার আবেদন সহ 7 প্রার্থী এক নম্বর দিয়ে পাস ঘোষণার নির্দেশ আদালতের

এনসিটিই-এর নিয়ম অনুযায়ী, বিদ্যমান ডিগ্রি কলেজে শিক্ষা বিভাগ থাকলে সেখানেও আইটিইপি চালুর সুযোগ রয়েছে। এর ফলে শিক্ষক শিক্ষণের বাজার কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যেতে পারে। অন্যদিকে, ছোট কলেজ বন্ধ হলে হাজার হাজার শিক্ষক ও কর্মচারীর চাকরি যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। রাজ্য সরকার এখনও এই সংকট মোকাবিলায় স্পষ্ট পরিকল্পনা না করায় উদ্বেগ আরও গভীর হচ্ছে।  

সময়সীমা

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে নতুন কোর্স চালু হলেও প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের চূড়ান্ত সময়সীমা ২০২৮ সাল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট সমাধানে রাজ্য ও কেন্দ্রের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। নতুবা, শিক্ষক শিক্ষণের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলির পতন অদূরভবিষ্যতেই সুনিশ্চিত।