নিউজ ডেস্ক: ফের বদলাতে পারে উচ্চ মাধ্যমিকের বেশকিছু বিষয়ের সিলেবাস। সিলেবাস নিয়ে একাধিক শিক্ষক সংগঠন আপত্তি জানিয়েছিল। কোন কোন টপিকে আপত্তি তা নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক সংসদের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। কাউন্সিল এই বিষয়ে তৎপরতাও দেখাচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, “আজ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য সিলেবাস পরিবর্তনের বিষয়ে স্পেসিফিক বিষয়গুলো জানতে চান। তাই সিলেবাস সম্পর্কে আমরা এই বিষয়গুলি সংসদ সভাপতিকে জানালাম।”
ইংরেজি, বাংলা ও ইতিহাসের সিলেবাস পরিবর্তন বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কাছে যে যে সাজেশন দেওয়া হয়েছে তাহল –
১. *উচ্চমাধ্যমিকে ইংরেজি সিলেবাস পরিবর্তন বিষয়ে আমাদের সাজেশন*
ওল্ড সিলেবাসে ইংলিশ ক্লাস ইলেভেনে সারা বছরের জন্য prose ছিল পাঁচটি। যাতে ‘নোবেল লেকচার’ ছিল ভীষণ বোরিং কিন্তু নিউ সিলেবাস – ২০২৪ এ ক্লাস ইলেভেনে দুটি সেমিস্টার মিলে সাতটি প্রোজ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ সিলেবাস বাড়িয়ে দেওয়া হলো। যা কিনা ছাত্রছাত্রীদের উপর অতিরিক্ত চাপ বলে মনে হয়। ফার্স্ট সেমেস্টারে ‘দা স্বামী এন্ড মাদার ওরশিপ’ বাই সিস্টার নিবেদিতা – এত ভাব গম্ভীর আধ্যাত্মিক বিষয় যা কিনা ছাত্র-ছাত্রীদের বোঝার ক্ষেত্রে বা বোঝানোর ক্ষেত্রে খুবই কঠিন ব্যাপার। এই প্রোজটি অবশ্যই চেঞ্জ করা উচিত। সেকেন্ড সেমিস্টারে তিনটি খুব বড় বড় প্রোজ রাখা হয়েছে এবং ‘অফ স্টাডিজ’ বাই বেকন রাখা হয়েছে। ‘অফ স্টাডিস’ ছোট হলেও ভীষণ নিরস ও কঠিন। ‘দ্য গার্ডেন পার্টি’ নতুন সংযোজন হলেও বড় ও রসকসহীন। আবার ‘নোবেল লেকচার’ বাই মাদার টেরেজা ভীষন একঘেঁয়ে। তাই ‘গার্ডেন পার্টি’ এবং ‘নোবেল লেকচার’ দুটোই চেঞ্জ করা দরকার। এই দুটির পরিবর্তে মনোগ্রোহী যে কোনো একটি ছোট প্রোজ দেওয়া দরকার। একাদশ শ্রেণির সেকেন্ড সেমিস্টারে ‘মাই লাস্ট ডাচেস’ কবিতাটির পরিবর্তে ‘দা লিসনার্স’ বাই ওয়াল্টার ডিলামারের কবিতাটি সংযোজিত হলে ভালো হয়।
একাদশ শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে কোন ধর্মীয় বিষয় নিয়ে গভীর আলোচনার বিষয় না রাখাই ভালো। বিগত দিনেও তা ছিল। যে কোনো ধর্মীয় বিষয় না রেখে অন্য অনেক বিষয় রয়েছে সেরকম বিষয়ে প্রোজ রাখা হোক যা ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় হবে।
দ্বাদশ শ্রেণিতে ‘তারা’ নাটকটি বাদ দেওয়া উচিত। কেননা এই বড় নাটকটি দুটি সেমিস্টারের ভাগ করে পড়ানোর কথা বলা হয়েছে। একই নাটক দুটি সেমিস্টারের ভাগ করে পড়ালে নাটকের সাজুজ্য বা গুরুত্ব থাকে না। এর পরিবর্তে আলাদাভাবে ছোট মনোগ্রাহী কোন নাটক দেওয়া যেতে পারে।
২. *উচ্চমাধ্যমিকে বাংলর সিলেবাস পরিবর্তন বিষয়ে আমাদের সাজেশন*
সিলেবাস বিস্তৃত, নম্বর কম, পড়ানোর জন্য বরাদ্দ সময় আরও কম। সাহিত্য পড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ, রসগ্রাহী আলোচনা, গোত্র নির্ণয়, লেখক পরিচিতি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও তার জন্য যথেষ্ট সময় দরকার।
‘পুঁই মাচা’ ভালো গল্প কিন্তু প্রাসঙ্গিকতা মাঝারি। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর ‘ডাইনি’ খুব ভালো একটি বিকল্প হতে পারে।স্বল্প পরিসরে এমন গল্প, কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ ইত্যাদি দিতে হবে যাতে সাহিত্যের প্রতি ভালোলাগা, দারুণ প্রাসঙ্গিকতা, মূল্যবোধ, গভীর ভাবনা, বিজ্ঞান মনস্কতা , মুক্ত চিন্তন, লিঙ্গ সাম্য ইত্যাদি যুগোপযোগী বিষয় থাকে।
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ এর গল্পের অনুবাদ হয়েছে আক্ষরিক, আক্ষরিক অনুবাদ নিকৃষ্ট হয়, এই কারণে সাহিত্য রস ক্ষুন্ন হয়েছে। রসানুবাদ প্রয়োজন। তাছাড়া ম্যাজিক রিয়ালিজম (আলোচ্য গল্পের গোত্র) একাদশের পাঠ্য হওয়ার যোগ্য নয়।
ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসের পাঠ্য বিষয় প্রচুর কিন্তু নম্বর অত্যন্ত কম। সেই কারণে প্রশ্ন করাটা প্রহসনে পরিণত হয়।
একাদশ দ্বাদশে এত বিশদে পড়ানোর দরকার নেই। যাঁরা বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে অনার্স পড়বেন তাঁদের শুধু কাজে লাগবে।
‘ছুটি’ ও ‘নুন’ ততটা প্রাসঙ্গিক নয়। রবি ঠাকুরের ‘গুপ্তধন’; ‘জীবিত ও মৃত’ কিংবা ‘স্ত্রীর পত্র’ পাঠ্য হতে পারে। গল্প কবিতা ইত্যাদি
নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্রষ্টার শুধু নাম দেখলে চলে না।
শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস আরও সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত।
প্রবন্ধের ক্ষেত্রে ‘মানস মানচিত্র’ শব্দবন্ধ বিভ্রান্তিকর।
প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিশদে বর্ণনা দরকার নেই। তাছাড়া নম্বর খুব কম। ফলে জ্ঞান, বোধ, প্রয়োগ ও দক্ষতা মূলক এবং অতি সংক্ষিপ্ত, সংক্ষিপ্ত, সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা মূলক এবং ব্যাখ্যা মূলক প্রশ্ন করা অসম্ভব। সুতরাং মূল্যায়ন অসম্পূর্ণ ও শিক্ষাবিজ্ঞান মানছে না।
‘আদরিনী’ অপ্রাসঙ্গিক, ‘অন্ধকার লেখাগুচ্ছ’ অনুপযোগী। অনেক ভালো লেখা বাদ দিয়ে এগুলো কীভাবে আসে?
বিবেকানন্দের এই প্রবন্ধ ত্রুটি যুক্ত।
‘হলুদ পোড়া’ হয়ে গেল ‘হলুদ পোঁড়া’। কি করে?
‘নানা রঙের দিন’ মূল্যহীন আর অপ্রাসঙ্গিক নাটক। বরং উৎপল দত্তের ‘নীলকণ্ঠ’ আজও প্রাসঙ্গিক। রূপক সাংকেতিক নাটক ‘ডাকঘর’ না দিয়ে ‘মুক্তধারা’ ভালো চয়েস ছিল।
সংকলন, পাঠ্যসূচি, সেমিস্টার, প্রশ্নের নম্বর, পাঠ্য বিষয়ের পছন্দের সময় শিক্ষার্থীর শ্রেণি, মানসিক বয়স, শিখন সামর্থ্য, ভালোলাগা, উপযোগিতা, প্রাসঙ্গিকতা, কাম্য শিখন সামর্থ্য, উৎকর্ষ, ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ ও এই বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার ইচ্ছা ইত্যাদি বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবনার দরকার ছিল।
কয়েকটি বিকল্প গল্পের নাম:
ডাইনি – তারা শংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
বিরিঞ্চি বাবা / শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী লিমিটেড – রাজশেখর বসু
টোপ – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
ইরফান আলি দু’নম্বর – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
ভারতবর্ষ – রমাপদ চৌধুরী
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস ও ভাষার ইতিহাস অতি সংক্ষেপে কিন্তু সার্বিকভাবে পড়ার জন্য লিখতে হবে লিখতে হবে।
বাংলা ব্যাকরণে এমন বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি রাখতে হবে? যা একদিকে প্রয়োজনীয় বটে আবার স্নাতক বা স্নাতকোত্তর স্তরের মতন স্পেশালাইজেশনের জন্য উপযোগী — এমন নয়।
*ভাষার ইতিহাস* আরও সংক্ষেপ ও মনোগ্রাহী করতে হবে। আই কিউ অনুযায়ী সিলেবাস করতে হবে।বিস্তারিত পড়াতে হলে প্রয়োজনে টুয়েলভ পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। এতো অল্প সময়ে সম্ভব নয়।
*সাহিত্যের ইতিহাস* মধ্যযুগ পর্যন্ত ইলেভেনে পড়ানো হোক। এতো বিরাট বিষয়কে কেবল ইলেভেনে পড়ানো ও পড়া সম্ভব নয়। সংক্ষেপিত হোক।আধুনিক যুগ টুয়েলভে নিয়ে যাওয়া হোক।
৩. *একাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সিলেবাস পরিবর্তনের বিষয়ে আমাদের সাজেশন*
একেবারে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশের ঘটনার পরম্পরা আলোচনা থাকার ফলে তার কোন কূলকিনারা নেই। হাজার হাজার প্রশ্ন যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো ভাবে দেওয়া যেতে পারে। এটা কোনভাবেই বাস্তবসম্মত সিলেবাস হতে পারে না। যে সিলেবাস করা হয়েছে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অনেক কিছুর সঙ্গে তার কোন যোগ নেই। নির্দিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কোন সময় কাল ধরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিলেবাস শেষ করার মতো বাস্তবসম্মত সিলেবাস করা দরকার।