কিংকর অধিকারী, বিশিষ্ট শিক্ষক: অভয়া বা তিলোত্তমার বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ চলছে। যতক্ষণ না প্রকৃত বিচার পাওয়া যায় আমাদের তা চালিয়ে যেতে হবে। আমি একটা প্রস্তাব রাখছি সকলের কাছে –
শুধু এই ঘটনার বিচারের মধ্য দিয়েই অপরাধীদের অপরাধ প্রবণতা শেষ হয়ে যাবে না। একেবারে প্রথম থেকেই এলাকায় এলাকায় ছোট থেকে ছেলেমেয়েরা বুঝতে শিখুক এই ধরনের অপরাধ মনুষ্য সমাজে চরম অন্যায়। সমাজ কোনভাবেই তা বরদাস্ত করবে না। রাস্তাঘাটে মেয়েরা যাতায়াতের সময়, কর্মক্ষেত্রে, বিভিন্ন জায়গায় ইভটিজিং-এর সম্মুখীন হয়, বহু ধরনের অবাঞ্ছিত ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় মেয়েদের। তারা মুখ বুজে সব সহ্য করে নেয়, পাশে কাউকে পায় না বলে। এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে হলে আমাদের সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
বর্তমানে এলাকায় এলাকায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে যেভাবে মানুষজন এগিয়ে এসেছেন তাঁদের নিয়ে আমরা কি প্রতিটি এলাকায় সংগঠিত কমিটি তৈরি করতে পারি না? যেখানেই এ ধরনের ঘটনা ঘটবে প্রমাণস্বরূপ কিছু ভিডিও তোলার চেষ্টা করুন এবং সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকার সংগঠিত কমিটিকে জানান। প্রতিরোধে যা যা ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তার উদ্যোগ নিতে হবে ওই কমিটিকে। সর্বস্তরের সাধারন মানুষ পাশে থাকার সাহস পাবে। দুষ্কৃতিদের বা অপরাধীদের বিরুদ্ধে সাহসের সঙ্গে দাঁড়াতে হবে। তার জন্য আমাদের একত্রিতভাবে যখন যেখানে এই ধরনের ঘটনা ঘটবে অত্যাচারীর পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে।
প্রয়োজনে থানা পুলিশ সহ যে ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা যায় তা গ্রহণ করতে হবে। প্রকৃত প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য এলাকাগুলোতে আমরা কি এইভাবে এগিয়ে আসতে পারি না? তা না হলে কিছু দিন পরে সব থেমে যাবে, একই জিনিস আবার চলতে থাকবে। আসল কাজ হবে না। আসুন, নিজের এলাকায় আমরা এভাবেই শুরু করি। অপরাধীরা ভয় পেতে শিখুক। চেতনা সম্পন্ন মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে এইটুকু কাজ করতে পারলে সমাজের অপরাধীরা অপরাধ করার সাহস পাবে না। ছোটরাও ছোট থেকে শিখবে এই আচরণ করা চলে না। এর মধ্য দিয়েই এই ধরনের অপরাধ প্রবণতা অনেকটাই কমে যেতে বাধ্য। সমগ্র পুরুষ সমাজ তার মর্যাদা ফিরে পাবে। এই আসল কাজটা করার জন্য প্রতিটি এলাকায় সংগঠিত শক্তি গড়ে উঠুক। জনগণ তাঁদের পাশে থাকুন। আসুন, নিচু স্তর থেকে এই আসল কাজটা আরম্ভ করি।
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকারীদের কাছে অনুরোধ, আপনারা এই ধরনের ডাক দিন সমাজের কাছে। আপনাদের আহ্বানে এলাকায় এলাকায় গড়ে উঠুক সচেতন মানুষের প্রতিরোধ কমিটি। আশা করি এর গুরুত্ব আপনারা সকলেই উপলব্ধি করবেন এবং শেয়ার করে সর্বত্র এই বার্তাটুকু পৌঁছে দেবেন। এটাই কিন্তু আসল সময়।
—কিংকর অধিকারী, শিক্ষক।