নিউজ ডেস্ক: দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট, ২০১৬ সালের এসএসসি’তে (SSC Recruitment Case Verdict) নিয়োগের পুরো প্যানেল বাতিল করেছে। এর ফলে চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী। এই ভাবে গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠছে। শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী বেশকিছু গুরুত্বপুর্ন প্রশ্ন তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, যে প্রশ্নগুলো আমরা তুলছি সে প্রশ্নগুলো যদি যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করেন তাহলে এই ব্যবস্থা বদলানোর জন্য আপনাদেরও প্রশ্ন তুলতে হবে।
১) এত বড় দুর্নীতির প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার এবং এসএসসিকে সেই দুর্নীতির তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে আদালতে জমা দিতে বাধ্য করা হলো না কেন?
২) এই আগাগোড়া দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারটাকে বহাল তবিয়তে রেখে তাদের শাস্তি না দিয়ে প্রমাণহীন নিরীহ শিক্ষক শিক্ষাকর্মীদের শাস্তি দেওয়া হল কেন?
৩) বিচারপতির বাড়িতে বস্তা বস্তা অবৈধ টাকার পাহাড় পাওয়ার পর শাস্তি হয় কেবল বদলি। তার চাকরি যায় না। আর অযোগ্যতার কোন সুনির্দিষ্ট ও মোক্ষম প্রমাণ ছাড়াই নিরীহ শিক্ষক-শিক্ষা কর্মীদের কলমের এক খোঁচায় চাকরি বাতিল হয় কী করে?
৪) যাঁরা তদন্ত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অযোগ্য প্রমাণিত হয়েছে তাঁদের বাতিল করে যতক্ষণ না বাকিদের অযোগ্যতা প্রমাণিত হচ্ছে ততদিন তাদের চাকরিতে বহাল রাখা হলো না কেন?
৫) তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করেই সকলকে এক আসনে ফেলে দিয়ে বাতিল করে দেওয়টা আইন বিরুদ্ধ নয় কি?
৬) বহু ক্ষেত্রে অপরাধী নেতা-মন্ত্রীরা, শেষ পর্যন্ত প্রমাণাভাবে বেকসুর খালার হয়ে যায় অথচ এক্ষেত্রে প্রমাণাভাবে শাস্তির খাঁড়া নামিয়ে আনা হল কেন?
৭) কাউকে বরখাস্তের পাশাপাশি সুদ সহ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে আবার কাউকে কেবল বরখাস্ত। এর দ্বারা প্রমাণ হয় দ্বিতীয় পক্ষের দোষ এখনো প্রমাণিত হয়নি। তার আগেই মুড়ি-মিছরি এক করে সকলকে বাতিল করা হলো কোন্ যুক্তির ভিত্তিতে?
৮) যে এসএসসি আগাগোড়া দুর্নীতিগ্রস্ত তাদের দিয়ে পুনরায় পরীক্ষা নিয়ে যোগ্যতা বিচারের দায়িত্ব দেওয়া যায়? কেন কোর্টের তত্ত্বাবধানে করার কথা বলা হলো না?
৯) বিদ্যালয় গুলিতে এমনিতেই শিক্ষক-শিক্ষা কর্মীর অভাব, তার উপর যথাযোগ্য নিশ্চিত প্রমাণ ছাড়া হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষা কর্মীর চাকরি কেড়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়া হলো কেন?
১০) সামগ্রিক এই ব্যবস্থা কি আসলে অতি দ্রুত এক ধাক্কায় পুরো সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে বেসরকারীকরণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে না?
১১) ‘একজন নিরপরাধ যেন কোনোভাবেই প্রমাণাভাবে সাজা না পায়’ – বিচারের এই বেসিক দিকটি কোনভাবে রক্ষিত হয়েছে কি?
১২) বাতিল হওয়া শিক্ষক শিক্ষিকাগণ বিগত এবং বর্তমান মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা মূল্যায়ন করেছেন। আইনি ভাবে যদি তাঁদের অবৈধ বলা হয় তাহলে সেই মূল্যায়নের ভিত্তিতে পরীক্ষার ফল কীভাবে প্রকাশিত হবে? নাকি সেখানে তাঁরা বৈধ?
১৩) বহু শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী এই চাকরি পাওয়ার পর অন্যান্য চাকরি পাওয়া সত্ত্বেও সেখানে যাননি, আজ তাঁদের ভবিষ্যৎ কী হবে?
১৪) যাঁরা নিজেরাই মন থেকে জানতেন যে দুর্নীতির মাধ্যমে চাকরিতে যুক্ত হননি তাঁরা ঘরবাড়ি তৈরি, বাবা-মায়ের চিকিৎসা ইত্যাদি কারণে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেলেছেন। আজ তাঁরা সেই ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবেন?
১৫) ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ থাকা সত্ত্বেও তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করে এই রায়দান হল কি করে?
১৬) এসএসসি বারবার কথা দিয়েছে তারা সঠিক তথ্য দিয়ে তদন্ত প্রক্রিয়াকে সাহায্য করবে। অথচ তারা সে কাজ না করায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো না কেন?
এক কথায় সরকার এবং এসএসসিকে সাজা না দিয়ে তাকে আড়াল করে প্রমাণ ছাড়া শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বরখাস্ত করার এই শাস্তি কোনভাবেই আইনসম্মত নয়। এটি সরকারের অপরাধকে সম্পূর্ণভাবে আড়াল করার একটা চেষ্টা। এর বিরুদ্ধে এইসব তথ্যের ভিত্তিতে এই রায় স্থগিত রেখে তদন্ত প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার আবেদন জানিয়ে রিভিউ পিটিশানের পাশাপাশি সর্বাত্মক তীব্র থেকে তীব্রতর আন্দোলন চাই। সমস্ত বঞ্চিতরা সেই আন্দোলনের ডাক দিক আমরা সবাই পূর্ণ সমর্থন নিয়ে সেই আন্দোলনের পাশে থাকবো। এই প্রশ্নগুলো যদি সত্য মনে করেন তাহলে প্রত্যেকে শেয়ার করে একটা গণ অভ্যুত্থানের পটভূমি তৈরি করতে সাহায্য করুন।