বিশ্ব বার্তা, কলকাতা: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের পর রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিক্ষোভ। এরই প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, গ্রুপ সি কর্মীদের মাসে ২৫ হাজার এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা প্রদান করা হবে। এই প্রকল্পের নাম রাখা হয়েছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল লাইভলিহুড অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি ইন্টারিম স্কিম, ২০২৫’। তবে সেই ঘোষণার পরপরই কলকাতা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয় এই সিদ্ধান্ত।
⚖️ হাইকোর্টে শুনানি ও বিচারপতির প্রশ্ন
বুধবার বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে বিচারপতি বলেন, “এখনই কোনও টাকা দেবেন না।”
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর এত দ্রুত এই ভাতা ঘোষণা কেন? কোনও আলোচনার সুযোগ বা যাচাই-বাছাই ছাড়াই এত তাড়াহুড়ো করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কেন, তা জানতে চান বিচারপতি।
⚠️ রাজ্যের বিরোধিতা ও আইনজীবীর সওয়াল
রাজ্যের এই সিদ্ধান্তের কড়া বিরোধিতা করেন বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য:
* এই ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত দুর্নীতিকে আড়াল করার উদ্দেশ্যেই নেওয়া হয়েছে।
* সুপ্রিম কোর্ট কেবলমাত্র সীমিত সময়ের জন্য শিক্ষকদের কিছু ছাড় দিয়েছে, গ্রুপ সি ও ডি কর্মীদের জন্য নয়।
* রাজ্য নিজের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে এই ভাতা ঘোষণা করেছে, যা আদালতের নির্দেশের পরিপন্থী।
* আদালতের আদেশ অমান্য করে এমন কোনও আইন প্রণয়নের অধিকার রাজ্যের নেই।
🧾 বিচারপতির আরও প্রশ্ন
সওয়াল-জবাব চলাকালীন বিচারপতি অমৃতা সিনহা রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তকে প্রশ্ন করেন:
* ভাতা প্রাপকেরা কি বাড়িতে বসেই এই টাকা পাবেন, নাকি কিছু কাজের বিনিময়ে?
* ২০ ও ২৫ হাজার টাকার অঙ্ক কী ভিত্তিতে নির্ধারিত করা হয়েছে?
* ঠিক কতজন এই ভাতা পাবেন?
* অতীতে কি এমন উদাহরণ আছে যেখানে এইভাবে অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়েছে?
* রিভিউ পিটিশন চলতে থাকলে কি তাঁদের ভাতা দেওয়া হবে?
এই প্রশ্নগুলির কোনো পরিষ্কার উত্তর না মেলায় আদালত আপাতত রায়দান স্থগিত রেখেছে।
পরবর্তী শুনানি
এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বৃহস্পতিবার। আদালতের পরবর্তী নির্দেশের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন চাকরি হারানো হাজার হাজার কর্মী ও শিক্ষাকর্মী।
📝 উপসংহার
চাকরি হারানো কর্মীদের জন্য আর্থিক সহায়তা দিতে চেয়ে রাজ্য সরকার একটি মানবিক উদ্যোগ নিলেও, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে আইনি বিতর্ক। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ এবং কঠোর প্রশ্ন রাজ্য প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে আবারও চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করাল। আগামী শুনানিতেই পরিষ্কার হবে এই ভাতা প্রকল্পের ভবিষ্যৎ।