নিউজ ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সম্প্রতি টিটাগড়ে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় এসএসসি কেলেঙ্কারি এবং চাকরিহারা শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। তাঁর বক্তব্যের মূল সুর হলো, আন্দোলনরত শিক্ষকরা পরীক্ষা দেওয়ার পরিবর্তে সরাসরি চাকরি ফেরত চাইছেন, যা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপন্থী ।
ব্রাত্য বসুর মূল বক্তব্য:
১. পরীক্ষা এড়ানোর অভিযোগ: ব্রাত্য বসু দাবি করেন, চাকরিহারা শিক্ষকদের একটি বড় অংশ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিত পুনরায় পরীক্ষা দেওয়ার পরিবর্তে “সসম্মানে চাকরি ফেরত” চাইছেন। তিনি বলেন, “পরীক্ষা দেওয়াটা সুপ্রিম কোর্টের আদেশ। আমরা কীভাবে তা উপেক্ষা করব?”
২. দাবিপত্রের অভাব: শিক্ষামন্ত্রীর মতে, আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে কোনো লিখিত দাবিপত্র জমা পড়েনি। তিনি মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের সাত দফা দাবির কথা শুনলেও সরকারি স্তরে তা আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি বলে জানান ।
৩. সরকারের অবস্থান: ব্রাত্য বসু জানান, রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে রিভিউ পিটিশন দায়ের করেছে এবং চাকরি ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়ায় কাজ করছে। তবে, তিনি স্পষ্ট করেন, “যোগ্য-অযোগ্য বাছাইয়ের দায়িত্ব আমার নয়।”
প্রেক্ষাপট: এসএসসি কেলেঙ্কারি ও ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ
২০১৬ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তীব্র হয়। আদালতের রায়ে ২৫,০০০ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের পর থেকে চলমান আন্দোলনের মূল কারণ হলো এই কেলেঙ্কারি ।
– ইতিহাসের তুলনা: বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস আমলের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অতীতে রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা দিয়ে চাকরি পাওয়া গেলেও বর্তমান কেলেঙ্কারির মাত্রা ভিন্ন। এখন “চাকরি বিক্রির বাজার” তৈরি হয়েছিল, যা পূর্ববর্তী শাসনামলে দেখা যায়নি ।
– পরীক্ষা ব্যবস্থার ক্রমবিবর্তন: ১৯৯৭ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশন চালুর উদ্দেশ্য ছিল নিয়োগে স্বচ্ছতা আনা। কিন্তু ২০১৩-১৪ সাল থেকে এই ব্যবস্থায় অনিয়মের অভিযোগ বাড়তে থাকে, যা শেষ পর্যন্ত গণবিক্ষোভের রূপ নেয় ।
আন্দোলনকারীদের অবস্থান ও সরকারের প্রতিক্রিয়া:
আন্দোলনরত শিক্ষকদের একটি অংশ দাবি করেন, তারা দুর্নীতির শিকার এবং ন্যায়বিচার চান। অন্যদিকে, ব্রাত্য বসু এর বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেন, “এসএসসি বা বিকাশ ভবন অবরোধ করা সমাধান নয়। সরকারি আধিকারিকদের কাজ করতে দিন” । তিনি আরও যোগ করেন, ৩,০০০ শিক্ষক ইতিমধ্যেই সরকারের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন।
বিচারিক প্রক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ:
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার রিভিউ পিটিশন জমা দিলেও, ব্রাত্য বসু স্পষ্ট করেন যে আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করলে শুধু সরকারই নয়, আন্দোলনকারীরাও “কনটেম্পট অফ কোর্ট”-এর মুখোমুখি হবেন ।
সমাজের প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক প্রভাব:
এই সংকট শুধু চাকরিহারা শিক্ষকদেরই নয়, পুরো শিক্ষাব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ব্রাত্য বসুর বক্তব্যে যদিও অতীতের তুলনা টানা হয়েছে, বিরোধী দলগুলি তৃণমূল সরকারের আমলে নিয়োগে “বাণিজ্যিকীকরণ”-এর অভিযোগ তোলে ।
উপসংহার:
এসএসসি কেলেঙ্কারির জটিলতা সমাধানে আদালত ও সরকারি প্রক্রিয়ার ওপর জোর দিয়েছেন ব্রাত্য বসু। তবে, আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে সরকারের সংলাপের অভাব এবং দাবি পূরণে অনিশ্চয়তা এই সংকটকে দীর্ঘস্থায়ী করছে। রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রেক্ষিতে এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাখাতের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট করেছে।