নিউজ ডেস্ক: কলকাতা হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে নবান্ন থেকে ৫০০ মিটার দূরে মন্দিরতলা বাসস্ট্যান্ডে তিনদিন ধরে টানা ধর্ণা অবস্থান শেষে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল ডেপুটেশন প্রদান সহ দুইজন সচিবের সাথে আলোচনা করেন। দাবি আদায়ে শতাধিক কর্মচারী ও শিক্ষকরা শহিদ মিনারের পাদদেশে ৭০০ দিনের মতো অবস্থান করছে। ৩৯% বকেয়া ডিএ অবিলম্বে প্রদান ও স্থায়ী আদেশনামা প্রকাশ, ৫ লক্ষের বেশি শূন্যপদে স্থায়ী নিয়োগ , যোগ্য অস্থায়ীদের স্থায়ীকরণ, ডিটেলমেন্ট / প্রতিহিংসামূলক বদলির আদেশনামা বাতিল ও এসএসসি-২০১৬ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যোগদের চাকরি বহাল রাখতে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
মুখ্য সচিব দিল্লীতে থাকায় সংশ্লিষ্ট দুই আধিকারিক ডেপুটেশন গ্রহণ করেন। সমস্ত দাবি ও বঞ্চনার সাথে সহমত পোষণ করে মুখ্য সচিবের সাথে আলোচনা করে অতিদ্রুত রিপোর্ট জানাবেন বলে জানান মুখ্য কনভেনার ভাস্কর ঘোষ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য, চন্দন গরাই, শৈবাল সরকার ও সুদীপ চন্দ।
মহার্ঘ ভাতা, স্থায়ী নিয়োগ সহ অন্যান্য দাবিতে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ ৬৯৮ দিন ধরে ধর্মতলার শহিদ মিনার পাদদেশে শান্তিপূর্ণ ধর্ণা অবস্থানে রত। ২বছর ধরে ধারাবাহিক লড়াই আন্দোলন ও আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যাশিতভাবে রাজ্যের প্রশাসনের গণতান্ত্রিক সৌজন্যবোধকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও কার্যক্ষেত্রে কর্মচারীদের ন্যায্য দাবির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের নিরবতা আমাদের বিস্মিত করেছে । সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে ২২-২৪শে ডিসেম্বর উচ্চ আদালতের অনুমোদনক্রমে নবান্নের কাছে মন্দিরতলা বাসস্ট্যান্ডে শান্তিপূর্ণ অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালিত হচ্ছে। মঞ্চের পক্ষ থেকে যে বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট সচিবদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো হলো :
১) মহার্ঘ ভাতা ( DA):
সর্বভারতীয় ভোগ্যপণ্য সূচক AICPI অনুসারে প্রাপ্য দিন থেকে মহার্ঘ ভাতা (DEARNESS ALLOWANCE) অবিলম্বে প্রদান করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অনুসরণ করে কেন্দ্র ও অন্যান্য রাজ্য সরকারের ন্যায় প্রাপ্য দিন থেকে মহার্ঘ ভাতা প্রদান করা হোক। ভারতবর্ষের বেশীরভাগ রাজ্য তাদের কর্মচারী ও শিক্ষকদের প্রাপ্য DA প্রদান করলেও পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার ব্যর্থ। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে বেতনের কার্যকরী মূ্ল্যের যে ক্ষতি হয়, তা পূরণ করার উদ্দেশ্যেই মহার্ঘভাতা প্রদান করা হয়। আদর্শ নিয়োগকর্তা হিসাবে সরকার এই দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না। সেক্ষেত্রে অসংগঠিত এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে যথাযথ মজুরি বা বেতন প্রদান নিশ্চিত করার নৈতিক অধিকার সরকারের থাকে না! মূল্যবৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ অবসরপ্রাপ্তরা। প্রসঙ্গত:, দিল্লীর বঙ্গভবন এবং চেন্নাই ইউথ হোস্টেলে কর্মরত রাজ্য সরকারী কর্মচারীরা কিন্তু AICPI অনুসারেই মহার্ঘভাতা পান। এই বৈষম্যের অবসান চাই। তাই আমাদের দাবি AICPI অনুসারে মহার্ঘভাতা প্রদানের স্থায়ী আদেশনামা প্রকাশ করতে হবে।
(২) সমস্ত শূন্যপদে স্থায়ী নিয়োগ:
জনগনের কাছে সঠিক সময়ে পরিষেবা পৌঁছে দিতে সমস্ত শূন্যপদ দ্রুত পূরণ করা প্রয়োজন। স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুত সমস্ত শূন্যপদে স্থায়ী পদে ৬ লক্ষ শূন্যপদে স্থায়ী নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। যে সকল ক্ষেত্রে নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে গেলেও নিয়োগপত্র দেওয়া সম্ভব হয়নি, সেক্ষেত্রে দ্রুততার সাথে স্বচ্ছভাবে নিয়োগপত্র দিতে হবে।
(৩) অস্থায়ীদের স্থায়ীকরণ:
বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে সমস্ত অস্থায়ী ও অনিয়মিত কর্মচারী/ শিক্ষক আছেন, তাদের মধ্যে যারা যোগ্য, তাদের দ্রুত স্থায়ীকরণ করতে হবে, সমযোগ্যতায় সমান বেতন প্রদান সুনিশ্চিত করতে হবে ও সকলপ্রকার পেশাগত সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে।
(৪) ডিটেলমেন্ট/ প্রতিহিংসামূলক বদলি:
ডিটেলমেন্ট/ প্রতিহিংসামূলক বদলির আদেশনামা বাতিল করতে হবে। এই ধরণের বদলির ফলে মানব সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার করতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। এই ধরণের বদলির ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা মানসিকভাবে বিদ্ধস্ত হয়ে সঠিক পরিষেবা প্রদান করতে সক্ষম হচ্ছেন না। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দাবি আদায়ে লড়াই আন্দোলন করলে দূরবর্তী স্থানে বদলি করে ভীতির সঞ্চার করা হচ্ছে।
(৫) SSC-2016 নিয়োগ প্রক্রিয়া:
সুপ্রিম কোর্টের পূর্বের শুনানি মোতাবেক SSC-2016 নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সম্ভাব্য আগামী ০৭/০১/২০২৫ তারিখে সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী শুনানিতে স্কুল শিক্ষা দপ্তর ও স্কুল সার্ভিস কমিশনকে বিশেষভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
যোগ্য অযোগ্য প্রার্থীদের পৃথকীকরণ (সেগ্রিগেশন) করার জন্য অবিলম্বে স্কুল সার্ভিস কমিশন ও স্কুল শিক্ষা দপ্তরকে পরবর্তী শুনানিতে এই তালিকা কোর্টে জমার নির্দেশ দিতে হবে, যোগ্যদের চাকরি বহাল রাখতে হবে এবং WBCSSC ও স্কুল শিক্ষা দপ্তরের তথ্য ও ডকুমেন্টস সংরক্ষণ না করতে পারার দায় যোগ্যদের উপর চাপানো যাবে না।
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের রাজ্য কনভেনার চন্দন গরাই বলেন, সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে রাজ্য সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুই সচিবের সাথে দীর্ঘ সময় নিয়ে সদর্থক আলোচনা হয়েছে, সমস্যা সমাধানের বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ আগামীতে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।”