Homeপশ্চিমবঙ্গনজিরবিহীন: টেট ফেল ৫ লাখ, উচ্চ প্রাথমিক ৫ লাখ, বিএড কলেজ এনওসি!...

নজিরবিহীন: টেট ফেল ৫ লাখ, উচ্চ প্রাথমিক ৫ লাখ, বিএড কলেজ এনওসি! দেখেনিন চাকরি বিক্রির রেট চার্ট

নিউজ ডেস্ক: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ থেকে বিএড কলেজের রেজিস্ট্রেশন, এমনকি এনওসি জোগাড়— সবকিছুরই একটি ‘অলিখিত মূল্যতালিকা’ ছিল বলে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে তৃতীয় অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ করেছে সংস্থাটি। তদন্তে এক সাক্ষীর বয়ানের ভিত্তিতে অভিযোগ, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, প্রাক্তন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রধান মানিক ভট্টাচার্য, কুন্তল ঘোষের মতো প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে চলেছে এই টাকার খেলা। এজেন্ট তাপস মণ্ডল, বিভাস অধিকারী, পলাশ মণ্ডলদের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াও উন্মোচিত হয়েছে চার্জশিটে।

সাক্ষীর জবানবন্দি: কী বলেছে সিবিআই?  

মুর্শিদাবাদের বিএড কলেজ মালিক মহিদুল হক আনসারির সাক্ষ্যকে ভিত্তি করে সিবিআই জানিয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে টেট পাস না করেও প্রাথমিক শিক্ষকতা পেতে কুন্তল ঘোষের কাছে টাকা গুনেছেন তিনি। প্রথমে ৫ জনের চাকরির জন্য ৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হলেও কাজ না হওয়ায় চাপ দিলে, কুন্তল মহিদুল ও তাঁর কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ নন্দীর চাকরির প্রস্তাব দেন। এবার চাওয়া হয় ২ লক্ষ টাকা। পরে উচ্চ প্রাথমিকে ৫ জনের চাকরির জন্য ২৫ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। টাকার বিনিময়ে ইন্টারভিউ ডাক পেলেও হাইকোর্টের রায়ে প্যানেল বাতিল হলে টাকা ফেরত নেন মহিদুল। 

বিএড কলেজ থেকে টাকা তোলার নেপথ্যে কারা?  

সাক্ষী মহিদুলের দাবি, বিএড কলেজের অনুমোদন পেতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ৭ লক্ষ টাকা দিতে হত। এনওসি জোগাড়ে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখতেন বিভাস অধিকারী। অন্যদিকে, মানিক ভট্টাচার্যের নির্দেশে তাপস মণ্ডল ও বিভাসের এজেন্টরা কলেজগুলির থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অফলাইন রেজিস্ট্রেশনের জন্য ৫-১০ হাজার টাকা আদায় করতেন। ইচ্ছাকৃতভাবে অনলাইন পোর্টাল বিকল রেখে এই দুর্নীতি চালানো হতো বলে অভিযোগ। 

তাপস-বিভাসের দ্বন্দ্ব ও ‘পূরবী’ সিনেমাহলের গল্প  

টাকা আদায়ের পাল্লায় তাপস ও বিভাসের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথাও উঠেছে তদন্তে। দুজনই মানিকের আস্থাভাজন হলেও টাকা তোলার পদ্ধতি ভিন্ন ছিল। বিভাসের এজেন্ট পলাশ মণ্ডল শিয়ালদাহের ‘পূরবী’ সিনেমাহলে টাকা জমা দিতেন। অন্যদিকে, তাপসের নেটওয়ার্কে পরিবারের সদস্যদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। 

রাজনৈতিক প্রভাবের বলয়  

সিবিআইয়ের মতে, কালীঘাটের সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র (কাকু) সহ স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে টেট মামলার সুযোগে চাকরি বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সরাসরি হস্তক্ষেপে বিভাসের মাধ্যমে কলেজগুলিকে এনওসি দেওয়া হতো বলে দাবি করা হয়েছে। 

পড়ুন:  ভয়ংকর দুর্নীতি: ২.৫ লক্ষ চাকরি প্রার্থী, শূন্যপদ ১৮৬টি! চাকরি পেলেন নেতা বা মন্ত্রীর নিকটাত্মীয়রা

প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী পদক্ষেপ  

এই মামলায় ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন মানিক ভট্টাচার্য, তাপস মণ্ডল সহ বেশ কয়েকজন। অনেকেই জামিন পেয়ে গেছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে রাজনৈতিক মহলে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। সিবিআইয়ের তদন্ত এখনও চলছে, আরও উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের জড়িত থাকার ইঙ্গিত মিলেছে বলে জানা গেছে। 

পড়ুন:  SET Result: সেট পরীক্ষার ফল প্রকাশ, সহকারী অধ্যাপক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি কবে? যা জানা গেল

শেষ কথা

শিক্ষাক্ষেত্রে এই দুর্নীতির ছোবলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজারো মেধাবী প্রার্থীর ভবিষ্যৎ। সিবিআইয়ের চার্জশিট প্রশ্ন তুলেছে প্রশাসনিক জটিলতা ও নৈতিক অবক্ষয়ের। এখন দেখার, বিচার প্রক্রিয়ায় কী হয় এবং রাজনৈতিক দলগুলি কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments