এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি: দীর্ঘ আন্দোলন, বিক্ষোভ ও অবস্থানের পর অবশেষে শনিবার রাতে প্রকাশিত হয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (WBSSC) প্রকাশিত ‘দাগি প্রার্থীদের তালিকা’। প্রথমে ঘোষিত ১৮০৪ জনের নাম প্রকাশ হলেও, এই তালিকা নিয়ে আবারও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সিপিআইএম নেতা তথা আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য।
রবিবার সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এটা পূর্ণ তালিকা নয়। যদি ওরা পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করে তাহলে দাগিদের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৭০০০! যারা ঘুষ দিয়ে বেআইনি পথে চাকরি পেয়েছেন।”
তিনি আরও দাবি করেন, সুপ্রিম কোর্টের তাড়নায় বাধ্য হয়ে কমিশন একটি “অসম্পূর্ণ তালিকা” প্রকাশ করেছে।
বিকাশের কথায়, “৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করা হচ্ছিল। এবার বাধ্য হয়ে দায় এড়াতে আংশিক তালিকা প্রকাশ করেছে কমিশন।”
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া আক্রমণ
দীর্ঘদিন ধরেই নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব ছিলেন বিকাশ রঞ্জন। এপ্রিল মাসে আন্দোলনের ময়দানে আক্রমণের শিকারও হন তিনি। এবারও তাঁর সুর ছিল একই রকম কড়া।
তিনি বলেন, “পুরো প্রশাসনিক পরিকাঠামো দুর্নীতিতে ভরে গেছে। নৈতিকতার জায়গা থেকে কাজ করার মানসিকতাই নেই। প্রশাসন অভিভাবকের মতো দায়িত্ব পালন না করে, দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক দলের রক্ষক হয়ে উঠেছে।”
তৃণমূলকে সরাসরি আক্রমণ
বিকাশ রঞ্জনের অভিযোগ, নিয়োগ প্রক্রিয়ার মূল লক্ষ্যই ছিল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) ক্যাডারদের চাকরি দেওয়া। তিনি আরও দাবি করেন, “এই দুর্নীতিতে আংশিকভাবে বিজেপিও এবং রাজ্যসরকারও হাত মিলিয়েছে।”
শনিবার রাত ৯টার পর কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকায় দেখা যায়, বহু নামের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। তালিকায় উঠে এসেছে রাজপুর-সোনারপুরের তৃণমূল কাউন্সিলর কুহেলি ঘোষ, জলচকের অঞ্চল সভাপতি অজয় মাঝি, খানাকুলের দাপুটে নেতা বিভাস মালিক ও তাঁর স্ত্রীর নাম।
বিরোধীদের ক্ষোভ
এই তালিকা প্রকাশের পর সরব হয়েছেন সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও। তিনি তৃণমূলের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দেন,
“দাগি তৃণ নেতা কারা? কে কত টাকা দিয়েছে? আর কারা টাকা নিয়েছে? লুটের টাকা ফেরত কবে আসবে? এর জবাব কে দেবে?”
সারকথা
একদিকে রাজ্যের শাসকদল ও কমিশনের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযোগ, অন্যদিকে অসম্পূর্ণ তালিকার অভিযোগে নতুন করে চাপে পড়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। আদালতের নির্দেশ মেনেই তালিকা প্রকাশ করলেও, তা নিয়ে বিতর্ক আরও ঘনীভূত হচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।



