কলকাতা, ০৬ জুন ২০২৫: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘভাতার (ডিএ) ২৫ শতাংশ পরিশোধের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে অভিনব প্রযুক্তিগত পদ্ধতি গ্রহণ করেছে নবান্ন। গত ১৬ মে দেশের শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ (বিচারপতি সঞ্জয় কারোল ও সন্দীপ মেহতা) রাজ্যকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া ডিএ’র প্রথম কিস্তি মেটানোর পাশাপাশি ৪ সপ্তাহের মধ্যে পদক্ষেপের অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দেওয়ার আদেশ দেন। এই জরুরি সময়সীমা মেনে চলতেই এখন প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।
প্রধান পদক্ষেপগুলি:
1. নতুন প্রযুক্তি পদ্ধতির রূপরেখা:
– একটি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিশেষ সফটওয়্যার তৈরি করতে, যা “ইন্টিগ্রেটেড ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম” (IFMS) পোর্টালের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।
– এতে ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিটি কর্মচারীর চাকরিকালের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
2. তথ্য সংগ্রহ পরিধি:
– সকল সরকারি দপ্তর, স্বশাসিত সংস্থা, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে এই পোর্টালে কর্মচারীদের তথ্য আপলোডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
– অবসরপ্রাপ্ত কর্মরতদের ও সংশ্লিষ্ট সময়কালের সেবার তথ্য জমা দিতে হবে।
3. গণনার সুবিধা:
– প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অর্থ দপ্তর প্রতিটি কর্মচারীর প্রাপ্য বকেয়া ডিএ’র সঠিক পরিমাণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারণ করতে পারবে।
– রাজ্যের মোট আর্থিক বোঝা (কত কর্মচারী × কত টাকা) এবং সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়ার রিপোর্ট প্রস্তুত করতেও সাহায্য করবে এই পদ্ধতি।
কেন এই জরুরি উদ্যোগ?
– ১৬ মে-র আদেশ অনুসারে, ২৭ জুনের মধ্যে ২৫% বকেয়া ডিএ পরিশোধ বাধ্যতামূলক।
– আগামী ১৩ জুনের মধ্যে আদালতকে অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
– ইতিমধ্যেই অর্থ দপ্তর সকল বিভাগ থেকে কর্মচারী সংখ্যা ও সেবাকালীন তথ্য চেয়েছে।
কর্মচারী সংগঠনের প্রতিক্রিয়া:
– কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ-এর সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় সতর্ক করেছেন: “নির্দেশ অমান্য করলে মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হবে।”
– বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি-র স্বপন মণ্ডলের মতে: “সরকার সময়মতো বকেয়া শোধ না করলে রাজ্যের আর্থিক স্বচ্ছতায় প্রশ্ন উঠবে।”
চলতি বিতর্ক:
– “রোপা কমিশন” (২০০৯) -এর সুপারিশ কার্যকর হওয়ার পরের সময়কালই এই বকেয়া ডিএ’র ভিত্তি বলে সরকার মনে করছে।
– প্রযুক্তিগত পদ্ধতি শেষ হলে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ স্পষ্ট হবে কে কত পাবেন।
পরবর্তী পর্যায়:
– IFMS পোর্টালে তথ্য জমা দেওয়ার পর অর্থ দপ্তর ব্যক্তিগতভাবে কর্মচারীদের প্রাপ্য টাকার পরিমাণ নিশ্চিত করবে।
– আদালতের রিপোর্ট ও টাকা বণ্টন প্রক্রিয়া একসঙ্গে এগোবে।
চাপ:
১২ লক্ষেরও বেশি কর্মচারী ও অবসরপ্রাপ্তদের জন্য এই পরিশোধ আর্থিক স্বস্তি বয়ে আনতে পারে, কিন্তু রাজ্যের কোষাগারে চাপ বাড়াবে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।